কলকাতা: জি ডি বিড়লাকাণ্ডে ধৃত দুই শিক্ষককে ৪ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠাল আদালত।
জি ডি বিড়লা স্কুলে শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক অভিষেক রায় ও মহম্মদ মফিজউদ্দিনকে শনিবার আলিপুর পুলিশ আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবীরা ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের আৰ্জি জানান।
অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা সওয়াল করেন, এফআইআরের তথ্য অনুযায়ী, মূত্রের সঙ্গে রক্ত বেরোচ্ছিল। তা সংক্রমণের মতো নানা কারণেই হতে পারে।
সরকারি আইনজীবী মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট দেখিয়ে সওয়াল করেন, শিশুর গোপনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা এদিন সওয়াল করেন, এফআইআরে শিশুর গোপনাঙ্গে স্পর্শ করার উল্লেখ রয়েছে। তাহলে এক্ষেত্রে কি পকসো আইনের ৪ নম্বর ধারা প্রযোজ্য?
জেল হেফাজতেও অভিযুক্তদের জেরা সম্ভব। তাই পুলিশ হেফাজতের বদলে তাঁদের জেল হেফাজতে পাঠানো হোক। যদিও, সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, এই ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। অনেক দিক খতিয়ে দেখতে হবে। সেজন্যই পুলিশ হেফাজত প্রয়োজন।
অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এদিন সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, আইনের ধারায় বলা আছে, কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট বা কর্মী এই অপরাধ করলে তা শাস্তিযোগ্য। কিন্তু, অভিযুক্ত দু’জন কর্মী নন, শিক্ষক। যদিও, সরকারি আইনজীবী সওয়ালে পাল্টা বলেন, শিক্ষক স্কুলের কর্মী হিসেবেই বিবেচিত হন।
পকসো মামলার শুনানি আলিপুর জেলা ও দায়রা কোর্টে দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে হয়। কিন্তু, শনিবার ছুটির দিন থাকায় এই বিশেষ আদালত বন্ধ ছিল। শুনানি হয় আলিপুর পুলিশ আদালতে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে।
এদিন সেই প্রসঙ্গও তোলেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা। তাঁরা বলেন, এই আদালত বিশেষ আদালত নয়। সোমবার বিশেষ আদালতে সোমবার শুনানি হোক। মাঝের দু’দিন অভিযুক্তদের জেল হেফাজতে রাখা হোক।
কিন্তু, সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, এই আদালতও পুলিশ হেফাজত দিতে পারে। এদিন আদালতে এফআইআরের ফটো কপি পেশ করা নিয়েও আইনজীবীদের একপ্রস্থ বাদানুবাদ বাধে। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন, এই কপিই মূল এফআইআর কিনা, তা কে বলবে।
তদন্তকারী অফিসার তখন বলেন, এফআইআরের মূল কপি বিশেষ বিশেষ আদালতে জমা পড়েছে। তাই এখানে ফটোকপি জমা দিতে হয়েছে। এই ফটোকপি যে মূল এফআইআরের, লিখিতভাবে তার দায়িত্ব নিচ্ছেন তাঁরা।
এনিয়ে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীদের সমালোচনা করেছেন নির্যাতিত শিশুর পরিবারের আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল। তিনি বলেন, অনেকেই চিৎকার করছে। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। যদিও, অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী তীর্থঙ্কর রায়ের দাবি, তাঁরা যা করেছেন, আইনগতভাবেই। তিনি বলেন, অনেকে আইন জানে না। আমরা আইনগতভাবেই বলেছি, এক্তিয়ার নেই। জেরক্স এফআইআরের ভিত্তিতে শুনানি হতে পারে না।
সওয়াল জবাব শেষে দুই ধৃত শিক্ষকের ৪ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
এদিকে, আদালতে পেশ করার আগে শনিবার সকাল থেকে যাদবপুর থানাতেও অভিযুক্তদের ঘণ্টাখানেক জেরা করা হয়। দফায় দফায় সেখানে যান আইপিএস অফিসাররা। থানায় আসেন ৪ আইপিএস অফিসার-- যুগ্ম কমিশনার ক্রাইম বিশাল গর্গ, ডিসি এসএসডি রূপেশ কুমার, ডিসি ডিডি-২ নীলু শেরপা চক্রবর্তী এবং ডিসি ফোর্থ ব্যাটেলিয়ন আনন্দ রায়। অভিযুক্তদের জেরা করার পাশাপাশি, কেস ডায়েরি-সহ অন্যান্য নথি খতিয়ে দেখে, কীভাবে মামলা পেশ করা হবে সেবিষয়ে পর্যালোচনা করেন তাঁরা।
দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনে তাজ্জব তাঁদের পরিবার থেকে বন্ধুবান্ধব। ধৃত শিক্ষক মহম্মদ মফিজউদ্দিন বেনিয়াপুকুরের এই মেসে থাকতেন পাঁচ বছর ধরে। কয়েকমাস আগেই বিয়ে হয়েছে। রুমমেটের দাবি, অন্যদিন মফিজউদ্দিন স্কুল থেকে চারটের পর ফিরতেন। কিন্তু, যেদিন ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ, সেদিন তিনি ফিরে আসেন সাড়ে তিনটে নাগাদ। পরদিন স্কুলে গেলেও সকাল সাড়ে দশটার মধ্যেই ফিরে আসেন। কিন্তু, মফিজুদ্দিন যে এমন কিছু করতে পারেন, তা এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না রুমমেটরা। তাঁদের দাবি, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হোক।
ধৃত আরেক শিক্ষক অভিষেক রায়ের বাড়ি বীরভূমে। অভিষেকের মা কবিতা রায় অবশ্য ছেলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতেই নারাজ। বলেন, ওই দিন ছুটি ছিল। ফাঁসানো হয়েছে। শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। অভিষেক ছোট থেকে শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৮ সালে স্নাতক।
তারপর মহারাষ্ট্র থেকে বিএড ও এমপিএড করেন। ২০১১ সালের ১৩ জুন যোগ দেন চাকরিতে। সেই ছেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনে বিস্মিত পরিচিতরা।