কলকাতা:  জ্বালানির রেকর্ড দাম এখন মধ্যবিত্তের হাত পোড়াচ্ছে। কর্নাটকে ভোটের জন্য একটানা ১৯ দিন পেট্রোল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি স্থগিত রাখা হয়। আর ভোট মিটতেই লাগাতার ৯ দিন ধরে দাম বাড়ল জ্বালানির।পেট্রোল, ডিজেল দু’টোর দামই ৯দিনে বেড়েছে প্রায় ২ টাকা। মঙ্গলবার কলকাতায় লিটার পিছু পেট্রোলের দাম ৭৯ টাকা ৪৯ পয়সা। আর ডিজেলের দাম লিটার পিছু ৭০ টাকা ৬৭ পয়সা।
ভারতের ইতিহাসে পেট্রোল বা ডিজেলের দাম এই জায়গায় কখনও পৌঁছোয়নি। ২০০৮ সালে ইউপিএ আমলে যখন অপরিশোধিত তেলের হু হু করে বেড়েছিল, তখনও না। সেসময় অপরিশোধিত তেলের দর ছিল ব্যারেল পিছু ছিল ১৪৫.৩১ ডলার। তখন কলকাতায় পেট্রোলের দর ছিল লিটার পিছু ৫০ টাকা ৬২ পয়সা। আর ডিজেলের দর ছিল লিটার পিছু ৩৪ টাকা ৮৬ পয়সা।
এখন বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দর ব্যারেল পিছু ৭২ ডলার। অর্থাৎ ২০০৮ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। কিন্তু, এখন কলকাতায় পেট্রোলের দাম লিটার পিছু ৭৯ টাকা ৪৯ পয়সা। আর ডিজেলের দাম ৭০ টাকা ৬৭ পয়সা প্রতি লিটার।
পেট্রোল-ডিজেলের এই চড়া দামের আঁচে এখন সাধারণ মানুষের ঘাম ছুটছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে নিজেদের দুচাকা বা চার চাকার যান কম বের করছেন। এদিকে, পেট্রোল-ডিজেলের দামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ভাড়া না বাড়ায় ঘোর সমস্যায় পড়েছে বাস মালিক সংগঠন। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা রাজ্য সরকারের কাছে জানিয়েছি। ২০১৪-র সেপ্টেম্বরে শেষ ভাড়া বেড়েছিল। এর মধ্যে তেলের দাম বেড়েছে। অথচ, ভাড়া বাড়ানো হয়নি। এখনই ভাড়া বাড়ানো না হলে এই শিল্পের স্বাভাবিক মৃত্যু হবে।
অনেকে বলছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য চাইলে করের বোঝা কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতেই পারে। কারণ, সাধারণ মানুষকে যে দামে পেট্রোল-ডিজেল কিনতে হচ্ছে, তার মধ্যে একটা বড় অংশ কেন্দ্র ও রাজ্যের কর। মঙ্গলবার কলকাতায় লিটার পিছু পেট্রোলের দাম ৭৯ টাকা ৪৯ পয়সা। এর মধ্যে কেন্দ্রের শুল্ক ১৯ টাকা ৪৮ পয়সা। রাজ্যের ভ্যাট ২৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২০ টাকা। সেস - ১ টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মোট করের পরিমাণ প্রায় ৪০ টাকা।
ডিজেলের ক্ষেত্রেও ছবিটা একই। মঙ্গলবার কলকাতায় লিটার পিছু ডিজেলের দাম ৭০ টাকা ৬৭ পয়সা। এর মধ্যে কেন্দ্রের শুল্ক ১৫ টাকা ৩৩ পয়সা। রাজ্যের ভ্যাট - ১৭ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১২ টাকা। সেস ১ টাকা। সব মিলিয়ে করের পরিমাণ প্রায় ২৮ টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই সরকারই চাইলে কর কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে পারে। কর বিশেষজ্ঞ মৃত্যুঞ্জয় আচার্য বলেন, সেন্ট্রাল ট্যাক্স নিচ্ছে। এটা কমানোর দাবি উঠছে। এটা কমানোর জায়গা আছে। যেসময় বিশ্ববাজারে ৩৫ ডলার হয়েছিল। তখনও আমাদের দেশে সেই অনুপাতে কমায়নি। সেসময় সরকারের রাজস্ব অস্বাভাবিক বেড়েছে। এখন যদি শুল্ক কমায়, তাহলে সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে।
লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৮ জুন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পেট্রোল পাম্প ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক তুষার সেনের দাবি, পেট্রোল-ডিজেলকে জিএসটির আওতায় আনা হোক। মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি। পাবলিক হ্যারাসড হচ্ছে। ব্যবসা মার খাচ্ছে।