কলকাতা: শুধু বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করাই নয়, ভারতের একাধিক রাজ্যও ঘুরে ফেলেছিল ধৃত দুই বাংলাদেশি জঙ্গি সামসাদ ও রিয়াজ। এসটিএফ-এর জেরায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলার দুই জঙ্গি সামসাদ মিঞা ওরফে তনবীর ওরফে সইফুল ওরফে তুষারকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয় আরেক জঙ্গি রিয়াজ ওরফে রিয়াজুল ইসলামকে।
এসটিএফ সূত্রে খবর, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে দুই জঙ্গি। পৌঁছয় কলকাতায়। সেখান থেকে তারা চলে যায় হায়দরাবাদে। সেখানে কষাইখানায় কাজ নেয় তারা। লক্ষ্য ছিল, হায়দরাবাদে কর্মরত বহু বাংলাদেশির ভিড়ে লুকিয়ে পড়া।
এসটিএফ সূত্রে দাবি, হায়দরাবাদেই একটি কম্পিউটার কোর্স করে জঙ্গি অভিযোগে ধৃত তনবীর। এরপর দু’জনে মিলে চলে যায় কর্ণাটকের বেলগামে। সেখানে জাল আধার কার্ড বানায় তারা। সেখান থেকে দুই জঙ্গি পৌঁছয় পুণেতে। এরপর তারা ফিরে আসে কলকাতায়।
এসটিএফ সূত্রে দাবি, এরপর বাংলাদেশ থেকে দুই জঙ্গির কাছে নির্দেশ আসে রাঁচি ও পটনায় যাওয়ার জন্য। দু’জনে সেখানে যায়। বিস্ফোরক সংগ্রহের চেষ্টা করে। তারপর ফিরে আসে কলকাতায়। অর্থাৎ, ধীরে ধীরে নিজেদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব লুকিয়ে পশ্চিমবঙ্গ,
হায়দরাবাদ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, বিহার ও ঝাড়খণ্ড-- ছ’ছটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘুরে ফেলে দু’ই জঙ্গি। নিরাপদে, নিশ্চিন্তে। এরপরই তারা অস্ত্রের খোঁজ শুরু করে।
এসটিএফ সূত্রে দাবি, কয়েকজন অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় ধৃত জঙ্গিদের। কিন্তু, তারা ওয়ান শাটারের মতো অস্ত্র দিতে পারছিল, অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নয়। এসটিএফ সূত্রে দাবি, এরপরই বসিরহাটের মনোতোষ দের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ধৃত দুই জঙ্গির। তারা মনোতোষকে বলে, আমরা বসিরহাট গিয়ে অস্ত্র দেখব। কিন্তু, মনোতোষ তাদের বলে, আমি কলকাতায় আসছি।
ততদিনে অবশ্য, সবাইকে ট্র্যাক করতে শুরু করে দিয়েছে এসটিএফ। এরপর তিনজনকে কলকাতায় গ্রেফতার করা হয়। বুধবার ২ জঙ্গি-সহ ৩ জনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়।
জামিনের আবেদন জানান ধৃতদের আইনজীবী। তীব্র বিরোধিতা করে সরকারি আইজীবী সওয়াল করে বলেন, এই গ্রেফতারির সঙ্গে দেশের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে আল কায়দা সংক্রান্ত নানা নথি মিলেছে। এরা একাধিক নাম ব্যবহার করত। আধার কার্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন নথি জাল করেছে। তাই ধৃতদের হেফাজতে রাখা প্রয়োজন।
দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে, জামিনের আর্জি খারিজ করে ধৃতদের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
ধৃতদের জেরা করে আরও তথ্য আদায় করতে চাইছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স।