কলকাতা: রিকশাচালক, ছাতুর সরবত বিক্রেতা থেকে চায়ের দোকান। মাসে পঞ্চাশ টাকা, একশো টাকা করে সবার থেকেই অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় তোলা আদায় করতেন বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে মাসের শেষে অঙ্কটা পৌঁছে যেত মোটা টাকায়। অভিযোগ, লাখের পাশাপাশি সামান্য কটা টাকাতেও কোনও অরুচি ছিল না অনিন্দ্যর।
সল্টলেকের রিকশাওয়ালা, ছাতুর সরবত বিক্রেতা থেকে ঝুপড়িবাসী, চায়ের দোকানদার-- তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে রেহাই ছিল না কারও। সবার জন্য তাঁর কাছে ছিল নির্দিষ্ট রেট চার্ট। যেমন, রিকশার জন্য মাসে ৫০ টাকা। তবে এটা কম ভাববেন না।
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ওয়ার্ডের মধ্যে সাতটি ব্লক রয়েছে। প্রতিটি ব্লকে গড়ে ১৫টি করে রিকশা চলে। অর্থাৎ সাতটি ওয়ার্ডে ১০৫টি রিকশা।
প্রতিটি থেকে ৫০ টাকা করে পেলে মাসের শেষে রিকশা থেকে মোট আয় ৫ হাজার ২৫০ টাকা।
অনেকে কটাক্ষের সুরে বলছেন, পাঁচ লাখি-পঁচিশ লাখি অনিন্দ্যর কাছে হাজার পাঁচেক টাকা নেহাতই সামান্য হলেও, তাতেও অরুচি ছিল না তাঁর! এবি-এসি ব্লকের গুমটি চায়ের দোকানের প্রতিটি থেকে অনিন্দ্য মাসে ১০০ টাকা করে তোলা নিতেন বলে অভিযোগ।
সল্টলেকের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডজুড়ে প্রায় আড়াইশো চায়ের গুমটি দোকান। প্রতিটি দোকান থেকে মাসে ১০০ টাকা করে নিলে আয় দাঁড়ায় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। নার্সারিও না কি নজর এড়ায়নি তৃণমূলের এই হেভিওয়েট কাউন্সিলরের! একটু দূরে ছাতু বিক্রি করেন ভিগু পাসওয়ান।
তাঁর কাছে পর্যন্ত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় মাসে ১০০ টাকা তোলা চান বলে অভিযোগ। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ওয়ার্ডে একটি ফাঁকা জমিতে আমাদের চোখে পড়ল তিনটি ঝুপড়ি। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের কাছেও তোলা চেয়ে রীতিমতো জুলুম চালাতেন অনিন্দ্য।
শুধু সাধারণ মানুষের ঘাড় ভেঙে থেকে তোলা আদায় নয়। অভিযোগ, তোলার বিনিময়ে অনেককে নিয়ম ভেঙে ব্যবসা সুযোগও করে দেন অনিন্দ্য। যেমন এবি-এসি মার্কেটের এই দু’শো স্কোয়ার ফুটের দোকানঘর পুরসভার। কিন্তু, সেখানে দিব্যি জলের দোকান চালাচ্ছেন এই বাবা-ছেলে। অভিযোগ, এর জন্য তাঁরা তৃণমূল কাউন্সিলরকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে দিতেন। ক্যামেরার সামনে টাকা নিয়ে মুখ না খুললেও, অনিন্দ্যর দৌলতে যে তাঁরা পুরসভার দোকানে ব্যবসা করছেন, তা স্বীকার করেছেন বাবা-ছেলে।
লাখেও আছে, শয়েও আছে! তাহলে অনিন্দ্যর কি কিছুতেই অরুচি নেই? প্রশ্ন অনেকেরই!