কলকাতা: বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শুক্রবার কলকাতায় প্রথম সভা থেকে ‘বিশ্ববাংলা’ ব্র্যান্ডের দিকে আঙুল তোলেন মুকুল রায়। যার জবাব দিতে শনিবার ফের আসরে নামল রাজ্য সরকার।
গতকাল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বিজেপির সভা থেকে সেই কাগজ দেখেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তোলেন মুকুল রায়। সরাসরি নিশানা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, বিশ্বকাপের আয়োজন করল বিশ্ববাংলা। বিশ্ববাংলা কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। এটা একটা কোম্পানি। মালিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া এই নেতা আরও বলেন, তৃণমূলের লোগো, লিফলেট, প্যামফ্লেট যেখানে ছাপা হয়। মালিক অভিষেক। তৃণমূল বলে জাগো বাংলা মুখপত্র। এটাও একটা কোম্পানি। মালিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুকুল দাবি করেন, বিশ্ব বাংলা লোগো এবং বিশ্ব বাংলা ব্র্যান্ডের পেটেন্টের জন্য ট্রেডমার্ক অফিসে আবেদন করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কাগজ দেখিয়ে মুকুল রায় বলবে। এখনও সেই আবেন ঝুলে রয়েছে। সরকার কি তা হলে এই লোগো ও ব্র্যান্ডের মালিক?
যা সব জায়গায় প্রোমোট করা হচ্ছে। যার জন্য এই ব্যান্ডের ভ্যালু বাড়ছে। মা-মাটি-মানুষ, জাগো বাংলা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নাম ও লোগো নিজের নামে করার জন্য ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশন অফিসে আবেদন করেছেন অভিষেক। ঠিক যে ভাবে বিশ্ব বাংলার জন্য করেছেন।
শনিবার মুকুলের অভিযোগের জবাব দেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সচিব রাজীব সিংহ। তিনি বলেন, মুকুল রায়ের কথা ভুল। বিশ্ব বাংলার লোগো রাজ্য সরকারের সম্পত্তি। এর কপিরাইট রাজ্য সরকারে। ৩ জন সরকারি আধিকারিক সংস্থার শেয়ারহোল্ডার। আর কোনও শেয়ারহোল্ডার নেই। মুখ্যমন্ত্রী তৈরি করেন লোগো। তিনি ব্যবহার করতে দেন রাজ্য সরকারকে। ১৯ জুন ২০১৪ সালে রাজ্য সরকার বিশ্ববাংলার জন্য রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজ (আরওসি)-র কাছে আবেদন করে।
তিনি যোগ করেন, আরওসির তরফে জানানো হয়, ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর, সি জে অ্যাসোসিয়েট আবেদন করেছিল আরওসির কাছে। তারপর দেখা যায়, ১১.০৬.২০১৪ সালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন উইথড্র করেন। ২০১৪সালের ১৯ জুন, রাজ্য সরকার ফের আবেদন জানায়। ২০১৪ সালের ১৫ জুলাই আরওসি আবেদন গ্রহণ করে। এরপর সেই বছরের ৩১ ডিসেম্বর রাজ্য সরকার রাইট পায় লোগো ব্যবহারের। স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যও বলেন, বিশ্ববাংলা রাজ্য সরকারের সম্পত্তি।
মুকুল রায়ের অভিযোগকে ঘিরে যে বিশ্ববাংলা বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে জবাব যে তিনিই দেবেন, তা কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। দিলীপ ঘোষ বলেন, বিশ্ববাংলার বিষয়ে সরকার জানে ও মুকুল রায় জানে। তারা বহুদিন একসঙ্গে কাজ করছে। এই সরকারটাই ভুয়ো। মানুষ ভুয়ো বিশ্ব বাংলা চায় না।
তৃণমূল সূত্রে খবর, মুকুল রায়কে তাঁর দাবির সত্যতা প্রমাণ করার জন্য আইনি নোটিস পাঠাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুল রায় তা না পারলে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলা করা হবে। যদিও এদিন মুকুল পাল্টা বলেন, কোর্টে গেলে ভালই হয়। সব সামনে আসবে।
মুকুল রায়ের অভিযোগকে হাতিয়ার করে এখনও তাঁর দল বিজেপি পথে না নামলেও, শনিবার যুব কংগ্রেসের কর্মীরা, পার্ক স্ট্রিটে বিশ্ব বাংলা বিপণীর সামনে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভকারীদের সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়।