কলকাতা:  মাধ্যমিক টেস্টের মানচিত্র নিয়ে বিতর্ক। কাশ্মীর ও অরুণাচলের তিনটি অংশকে ভারতের বলে না দেখানোর অভিযোগ বিজেপির। নেপথ্যে চক্রান্ত। মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে পদক্ষেপের নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর।
বিজেপির দাবি, মাধ্যমিকের টেস্টে, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু স্কুলে এই ম্যাপটি পয়েন্টিংয়ের জন্য দেওয়া হয়েছিল। যেখানে কাশ্মীরের দুটি অংশ ও অরুণাচল প্রদেশের একটি অংশকে ভারতের বাইরে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের কাছ থেকে ম্যাপটি নিয়েছিল স্কুলগুলি।
বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, পড়ুয়াদের যে মানচিত্র দেওয়া হয়েছে তাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীর, আকসাই চিন, অরুণাচল প্রদেশকে পাকিস্তান ও চিনের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন এই কাজ করেছে বলে তাঁর অভিযোগ।
বিজেপি সূত্রে দাবি, তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের সদস্যদের একাংশ, নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে, স্কুলগুলিকে কার্যত বাধ্য করছে তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন নিতে। রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের কাছ থেকে স্কুলগুলিকে সরবরাহ করা হয়েছে। স্কুলগুলির নাম দিতে হবে। তদন্ত করে দেখা হোক, পিছনে কারা রয়েছে? কারণ দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও বিজেপির এই মানচিত্র-অভিযোগের নেপথ্যে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, অসত্য ছবি দেখিয়ে ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা। অশান্তির ছড়ানোর জন্য নানা চক্রান্তে বিজেপি লিপ্ত। স্কুল নিজে ছাপায়। প্রথমে দেখেই সন্দেহ হয়েছিল। বোর্ড প্রশ্ন করে না। আমরা করিনা। ম্যাপ দেখলাম, ভিতরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের খাতার ওয়াটার মার্ক দেখানো হয়েছে।
শুধু চক্রান্তের অভিযোগ তুলেই ক্ষান্ত থাকেননি শিক্ষামন্ত্রী। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে পাশে বসিয়ে আইনি পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বলেন, আমি পর্ষদকে বলছি, এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশে যান। দোষীদের বের করা হোক। যিনি বলেছেন, তাঁকেও তদন্তের আওতায় আনা হোক।
পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে বিজেপি। রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তৃণমূলের শিক্ষা সংগঠন থেকে নিয়েছি। ক্ষমতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখান। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমতা থাকলে আমাদের গ্রেফতার করে দেখান। শিক্ষামন্ত্রীর এটা ভাষা, বলছেন গ্রেফতার করতে হবে, তদন্ত করলেন না। সিবিআই তদন্ত করা হোক।
এদিকে যে তৃণমূল প্রভাবিত যে শিক্ষক সংগঠনের দিকে বিজেপি আঙুল তুলছে, তারা বলছে এই অভিযোগ পুরোপুরি মনগড়া। পঃবঃ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাফাই , ওই ম্যাপ তাঁদের দেওয়া নয়।
বিজেপি সূত্রে দাবি, মানচিত্র-বিতর্কের জেরে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে পর্ষদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সূত্রের খবর, শিক্ষামন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত পেয়ে আইনি পদক্ষেপের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এদিকে যে মাধ্যমিকের টেস্টের ম্যাপ নিয়ে এত বিতর্ক, সেই টেস্টের প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগ পর্যন্ত উঠেছে! গত সাতই সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীকে একটি চিঠি দেন তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য শিক্ষক ও শিক্ষা বিষয়ক কর্মচারী সমিতি। তারা অভিযোগ করে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টের প্রশ্নপত্র বিক্রিকে কেন্দ্র করে জেলা জেলায় ভুইফোঁড় প্রকাশনা সংস্থা গজিয়ে উঠেছে! এর প্রেক্ষিতে, গত ২৫ অক্টোবর জেলা স্কুল পরিদর্শকদের চিঠি দিয়ে, কড়া ব্যবস্থার নির্দেশ দেন স্কুলশিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিব।
বিষয়টি নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ণমন্ত্রককে চিঠি লিখবেন জানিয়ে রাজু বলেছেন, এ ব্যাপারে তাঁরা আইনি পদক্ষেপ নেবেন এবং প্রতিবাদ জানাবেন। বিজেপি বিষয়টি ছেড়ে দেবে না বলে জানিয়েছেন রাজু। বিজেপি নেতার আরও অভিযোগ, এ রাজ্যে কোনও গণতন্ত্র নেই। পুরো তৃণমূল সরকারই যেন রাজ্য আসা জঙ্গিদের সমর্থন করছে। বিষয়টি তাঁরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলেও জানিয়েছেন রাজু।
বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহারও অভিযোগ, তৃণমূল ভারতকে টুকরো করতে চাইছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ব্যাখ্যাও দাবি করেছেন।