কলকাতা:  রামনবমীর দিনে সঙ্ঘের মিছিলের পাল্টা কৌশল তৃণমূলের। একদিকে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে যখন রাজ্যজুড়ে মিছিল বের করে রামনবমী পালন করল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এবং তাদের শাখা সংগঠনগুলি, সেখানেই পাল্টা রামভক্ত হনুমানের পুজো করল তৃণমূল।
কলকাতা থেকে জেলা। রামনবমী উপলক্ষ্যে রাস্তায় নেমে শক্তিপ্রদর্শন করল আরএসএস এবং তাদের শাখা সংগঠনগুলি। মাথায় গেরুয়া ফেট্টি, হাতে অস্ত্র, গলায় জয় শ্রীরাম স্লোগান। কোথাও সশস্ত্র মিছিলে অস্ত্র হাতে দেখা গেল ৫-৬ বছরের শিশু থেকে মহিলাদেরও।

সকালে প্রথম মিছিলটি বেরোয় দক্ষিণ কলকাতায়। জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে দিতে ভবানীপুর, পদ্মপুকুর, চক্রবেড়িয়া প্রদক্ষিণ করে গেরুয়াধীরা। রামনবমী উপলক্ষ্যে এই মিছিলে শিশুদের হাতেও ছিল অস্ত্র! আরেকটি মিছিল গড়িয়া মোড় থেকে রামগড়, গাঙ্গুলি বাগান, বাঘাযতীন হয়ে যায় বিজয়গড় পর্যন্ত। উত্তর কলকাতায় মানিকতলার রাম মন্দির থেকে যায় বেলেঘাটা পর্যন্ত একটি মিছিলে উঠে আসে রামমন্দির ইস্যুও। এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা তুষার ঘোষও। বলেন, প্রয়োজন পড়েছে বলে রাস্তায় বেরিয়েছি।


অস্ত্র নিয়ে রামনবমীর বিশাল মিছিল বীরভূমে


শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাতেও রামনবমী উপলক্ষ্যে গেরুয়া শিবিরের মিছিল বেরোয়। বীরভূমের সিউড়ি, কড়িধ্যা, দুবরাজপুর, বোলপুর, খয়রাশোলে সশস্ত্র মিছিলের ডাক দেয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। মিছিলে অস্ত্র হাতে দেখা যায় শিশুদেরও। যা নিয়ে কটাক্ষ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বলেন, আইএসের মতো বাচ্চাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। যদিও, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, অস্ত্র ব্যবহার করা যেতেই পারে। কিন্তু তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, রামের আবার অস্ত্র কোথায় ছিল? তার তো তীর ধনুক ছিল। তিনি জানান, প্রশাসন নিশ্চয় দেখবে।

পাশাপাশি, হাওড়া স্টেশনের কাছে ব্যান্ডেল বাগানেও রামনবমী উপলক্ষ্যে মিছিল বের হয়। জয় শ্রী রাম স্লোগানের পাশাপাশি মিছিলে চোখ টানে তরোয়াল ও লাঠি খেলা। রামনবমী উপলক্ষে দুর্গাপুরের কাদা রোড থেকে মেন গেট পর্যন্ত অস্ত্র হাতে মিছিল করেন মহিলারা। আয়োজক দুটি ধর্মীয় সংগঠন। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে সশস্ত্র মিছিলের আয়োজন করা হয়।


রামনবমী ঘিরে বিজেপি-সঙ্ঘ বনাম তৃণমূল টক্কর,সকাল থেকেই সশস্ত্র মিছিল, বাইক র‍্যালি,পাল্টা হনুমান পুজোর ঘোষণা তৃণমূলের


গেরুয়া শিবির যখন বিশালাকারে রামনবমী উৎসব পালনে করল, তখনই রাজ্যজুড়ে হনুমান পুজোয় মেতে উঠতে দেখা গেল তৃণমূলকে। এদিন অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশে বীরভূমজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় হনুমান পুজোর আয়োজন করে শাসক দল। অনুব্রত নিজেও সিউড়ির একটি মন্দিরে হনুমান পুজোয় অংশ নেন। আরএসএসের মিছিল নিয়ে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। বলেন,
আমার থেকে বড় হিন্দু কেউ নেই। আমি দু’বেলা পুজো করি। এরা কে আমাকে শিক্ষা দেবে। এসব করে কিছু করতে পারবে না। বীরভূমের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল কাউন্সিলর-বিধায়করা। দাঁড়িয়ে থেকে হনুমান পুজো করান।
নাম না করে অনুব্রতকে পাল্টা কটাক্ষ করে বাবুল সুপ্রিয় ট্যুইট করে বলেন, তৃণমূলের ‘কেষ্ট-বিষ্টুরা’ রামভক্ত হনুমানের পুজো করছে। যদিও, এটাও টিএমসি-র সাম্প্রদায়িক ভোট-রাজনীতি, ভক্তি-ভাব নয়, তবুও বলব ভালই তো।


[embed]https://twitter.com/SuPriyoBabul/status/849527776138887168[/embed]

হাওড়াতেও গেরুয়া শিবিরের পাল্টা মিছিল করে তৃণমূল। মিছলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা উত্তর হাওড়ার বিধায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল। সঙ্গে ছিলেন হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ এবং তৃণমূল কাউন্সিলররা। তৃণমূলের মিছিল থেকেও ওঠে জয় শ্রীরাম স্লোগান। এপ্রসঙ্গে হাওড়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপ চক্রবর্তী বলেন, রাম কারও একার নয়।

শিলিগুড়ির গাঁধী ময়দান থেকে শুরু করে তৃণমূলের মিছিল শিলিগুড়ি শহর পরিক্রমা করে। দুর্গাপুরেও সঙ্ঘের পাল্টা মিছিল বার করে তৃণমূল। বিজেপি অবশ্য তৃণমূলের মিছিল নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে। দলের রাজ্য সহ সভাপতি রাজকমল পাঠকের দাবি, তৃণমূল মিছিল বার করেছে। তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সমস্যা। কারণ, তৃণমূল ভেঙে আমাদের দলে চলে আসছে। বসিরহাটে অসংখ্য কর্মী জয়েন করেছে।
পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, উত্তরপ্রদেশের ভোটের ফলের পর কিছু লোক অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। এ রাজ্যের মাটিতে তারা সফল হবে না।



তৃণমূল ও বিজেপিকে একযোগে কটাক্ষ করেছে বামেরা। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, মোদী রাম হলে, এ রাজ্যের সরকার হনুমান। সব মিলিয়ে রামনবমীর মিছিল ও পাল্টা মিছিল ঘিরে দিনভর সরগরম রাজ্য।