কলকাতা: প্রথমে কল সেন্টারে চাকরির নামে বিজ্ঞাপন। তারপর স্মার্ট কর্মপ্রার্থীদের বাছাই। এরপর নিয়োগ, তারপর প্রশিক্ষণ।


গোটা প্রক্রিয়াটাই সারা হয় পেশাদারিত্বের মোড়কে! আগাগোড়া কর্পোরেট টাচ! কিন্তু আসলে এটা একটা প্রতারণার জাল! এভাবেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা! আসানসোলে এরকমই একটি প্রতারণা-চক্রের পর্দাফাঁস করেছে সিআইডি।

রীতিমতো কল সেন্টার খুলে, ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের ফোন করা হত! লক্ষ্য ছিল, যেনতেন প্রকারেণ, ডেবিট কার্ডের তথ্য হাতানো!

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জেরায় উঠে এসেছে, ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে গ্রাহককে ফোনে বলা হত, আপনার ডেবিট কার্ড এখুনি ব্লক হয়ে যাবে। অ্যাক্টিভ রাখতে হলে দ্রুত পিন দিয়ে দিন!

এই ফাঁদে কেউ পা দিলেই, কেল্লা-ফতে প্রতারকদের! মুহূর্তের মধ্যেই ফাঁকা অ্যাকাউন্ট!

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করার কথা বলছে কেন্দ্রীয় সরকার। এটাকেও প্রতারণার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে!

সিআইডি সূত্রে দাবি, ধৃতরা জানিয়েছে, গ্রাহককে ফোনে বলা হত, তিনি কি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার নম্বর লিঙ্ক করিয়েছেন?

গ্রাহক যদি বলতেন, না, তখন ওই কল সেন্টার থেকে বলা হত, সে কি, এখনও করাননি! আপনার অ্যাকাউন্টই তো ব্লক হয়ে যাবে! তাড়াতাড়ি আধার নম্বর ও ডেবিট কার্ডের পিন দিন। একটা ওটিপি যাবে। সেটাও তাড়াতাড়ি দেবেন।

আর এই কাজে মূলত পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদেরই টার্গেট করত প্রতারকরা। যাতে খুব সহজেই তথ্য হাতানো যায়!

সেরকমই ফাঁদে পা দিয়েছেন সরশুনার বাসিন্দা এই প্রবীণ দম্পতি! একবার নয় দু’বার!

অভিযোগ, ২ বছর আগে গৃহকর্তার এসবিআই অ্যাকাউন্ট থেকে লোপাট হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।

এরমধ্যেই মাস দুয়েক আগে ফের প্রতারণার শিকার হন তাঁর স্ত্রী! আরেকটি এসবিআই অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ হাজার টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ!

সিআইডি সূত্রে খবর, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে,  হাতানোর পর, কোনও একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে ওই টাকা রাখত না প্রতারকরা!

এ জন্য ব্যবহার করা হত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ওয়ালেটকে! গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ধাপে ধাপে ডেবিট হওয়ার পর ওই টাকা প্রতারকদের একাধিক ওয়ালেটে চলে যেত।

প্রয়োজনমতো সেই সব ওয়ালেটকে থেকে টাকা তুলে নিত প্রতারকরা।

সিআইডি সূত্রে দাবি,  প্রতারণার জাল ছড়াতে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ‍মডেলে কাজ করত এই চক্র!

কয়েকশো গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে তারা প্রায় কোটি টাকা লোপাট করেছে!

তবে এ ধরণের চক্রগুলি যে কলকাতা কিম্বা এ দেশে বসেই কাজ করছে এমন নয়। সূদূর চিনে বসেও এরা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে!