কলকাতা ও নয়াদিল্লি: বামেদের নবান্ন অভিযানের পর বিজেপির লালবাজার অভিযান। তিনদিনের মধ্যে ফের একবার রণক্ষেত্র কলকাতা। আঁচ গিয়ে পড়ল দিল্লিতেও। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপি।
এদিন কলকাতার তিনটি পয়েন্ট থেকে লালবাজারের উদ্দেশে মিছিল শুরু করে বিজেপি-- হাওড়া, ধর্মতলা ও কলেজ স্কোয়ার। পুলিশ ও বিজেপি কর্মীদের ঠোকাঠুকিতে উত্তেজনার পারদ চড়েছে প্রতিটি জায়গাতেই।


দিলীপ ঘোষ ও লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হাওড়া থেকে মিছিল এগোয় লালবাজারের দিকে। ব্রেবোর্ন রোডে বিজেপি কর্মীরা বাঁশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দু’পক্ষের ধস্তাধস্তির মাঝেই হঠাৎ মিছিলের মধ্যে থেকে শোনা যায় বোমার আওয়াজ। এরপরই পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। সঙ্গে ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস।
কলেজ স্কোয়ারের মিছিলটি বৌবাজার, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট হয়ে লালবাজারের উদ্দেশে এগোয়। ফিয়ার্স লেনের কাছে পুলিশ প্রথম মিছিল আটকায়। শুরু হয়ে যায় ধস্তাধস্তি। পুলিশের লাঠিচার্জের মুখে আর এগোতে পারেননি বিজেপি কর্মীরা। বিজেপি কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু করে। পাল্টা বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ।


বিজেপি কর্মীদের রোষ গিয়ে পড়ে পুলিশের গাড়ির ওপর। বিজেপি কর্মীদের একটি দল বৌবাজারের দিকে ফিরে গিয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর্মহাস্ট স্ট্রিট থানার ওসির গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় এলাকা। আর্মহাস্ট স্ট্রিট থানার ওসির গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় এলাকা। একটি অ্যাম্বাসাডর উল্টে দেয় বিজেপি কর্মীরা। এমনকী, বিজেপি কর্মীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ সার্ভিসের ওষুধ ভর্তি গাড়িও।


ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল থেকে বিজেপির মিছিল এগোয় ভিক্টোরিয়া হাউস হয়ে। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের কাছে পুলিশ তাদের আটকালে পরিস্থিতি রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। পুলিশের লাঠির মুখে প্রথমে পিছু হঠলেও পরে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ও ইট ছুড়তে শুরু করে বিজেপি কর্মীরা। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতেও পুলিশের একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে বিজেপি কর্মীরা।



এরইমধ্যে দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, বিজেপি রাজ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে এভাবে সরকারি সম্পত্তি নষ্টের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। নিজের মোবাইলে ভিডিও দেখিয়ে বলেন, আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছে।


পাল্টা তৃণমূল সরকার এবং পুলিশকে নিশানা করেছে বিজেপি। এরপর বিকেলে দিল্লিতে ১৮৩ নম্বর সাউথ অ্যাভিনিউয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বাসভবনে উঠেছেন মমতা, সেখানে পৌঁছে যান জনা কয়েক বিজেপি সমর্থক! বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। যাকে রাজনৈতিক অসৌজন্য হিসাবেই দাবি করছে তৃণমূল।


কারণ, বিজেপি নিজেই বলছে, দিল্লিতে মোদী-মমতার বৈঠকের মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক হতেই পারে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, সেক্ষেত্রে রাজধানী সফররত একজন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে কেন বিক্ষোভ দেখানো হবে? রাজনৈতিক আন্দোলনকে কেন কারোর বাসভবন পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে?