কলকাতা: পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী চন্দন মাজির দায়ের করা মামলায় একদিকে স্বামী এমএভি রাজুকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ। ব্যাঙ্কে ভারতী ঘোষের লকারে তল্লাশি। অন্যদিকে, ৬ দিনের সিআইডি হেফাজতে ধৃত দাসপুর থানার প্রাক্তন ওসি প্রদীপ রথ। সোনা হাতানোর মামলার তদন্তে তৎপর সিআইডি।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা। সিআইডির পাঠানো নোটিসের প্রেক্ষিতে, আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে সিআইডির সদর দফতরে হাজির হন প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষের স্বামী এমএভি রাজু। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ এমএভি রাজুকে সঙ্গে নিয়ে ভবানীভবন থেকে গোয়েন্দারা রওনা হন সাদার্ন অ্যাভিনিউ-এ একটি ব্যাঙ্কের শাখায়। ওই শাখায় ভারতীর দু’টি লকার রয়েছে।
দাসপুরের ব্যবসায়ী চন্দন মাজীর কাছ থেকে সোনা হাতানোর মামলায় ভারতী ঘোষের ওই দু’টি লকারে এদিন তল্লাশি চালায় সিআইডি। রাজু ও তাঁর আইনজীবীর উপস্থিতিতে খোলা হয় দুটি লকার। তল্লাশি চলে সাড়ে চার ঘণ্টারও বেশি সময়।
ইতিমধ্যেই ভারতী ঘোষ দাবি করেছেন, ১৯৯৪ সালে তাঁর বিয়ের সময় বাপের বাড়ি থেকে বেশ কয়েক ভরি সোনার গয়না পান। ২০১৭ সালে সরকারকে দেওয়া সম্পত্তির খতিয়ানে ভারতীর দাবি, তাঁর ১০০ ভরি সোনা রয়েছে। গতকাল তিনি বলেছিলেন, ১৯৯৪ সালে আমি পুলিশে যোগ দেওয়ার আগে, ২৪ বছর আগে, আমি আমার অ্যাসেট স্টেটমেন্ট সরকারকে দিয়েছিলাম, যাতে লেখা আছে আমার বাবা মধুপুরের জমিদার বাড়ির বড় ছেলে। আমি জমিদার বংশের মেয়ে, আমার ৭৫ তোলা সোনা আমাকে বিয়ের সময় দিয়েছিল। তারও বিবরণ আমি আমার অ্যাসেট স্টেটমেন্ট-এ দিয়েছি।
যদিও সিআইডি সূত্রে খবর, লকার দু’টিতে মিলেছে ১০০ ভরির কিছু বেশী সোনার অলঙ্কার। সেগুলি নতুন গয়না এবং হলমার্কযুক্ত। তা দেখেই গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন, গয়নাগুলি কবে কোথায় তৈরি। সেই সব গয়নায় হাতের ছাপও পরীক্ষা করে দেখেন সিআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা। গোটা তল্লাশি প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি করে রাখা হয়।
লকার থেকে উদ্ধার হওয়া গয়নাগুলি বাজেয়াপ্ত করেছে সিআইডি। সিল করা হয়েছে লকারগুলি। সিআইডি জানতে পেরেছে, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভারতী ঘোষ এই ব্যাঙ্কে শেষ এসেছিলেন।
অন্যদিকে, একই মামলায় সিআইডি হেফাজতে দাসপুর থানার প্রাক্তন ওসি প্রদীপ রথ। এদিন সকালে ভবানীভবন থেকে ধৃতকে নিয়ে ঘাটালের উদ্দেশে রওনা হয় সিআইডি-র একটি দল। দুপুর ২টো নাগাদ দাসপুর থানার প্রাক্তন ওসিকে তোলা হয় ঘাটাল মহকুমা আদালতে।
সূত্রের খবর, জামিনের আবেদন করলেও তা নিয়ে জোরদার সওয়াল করেননি ধৃতের আইনজীবী। তিনি বলেন, হেফাজতের মেয়াদ যেন বেশি না হয়। সিআইডির আইনজীবী ১৪ দিনের হেফাজতের আবেদন করেন। সওয়াল-জবাব শেষে ৬ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
অভিযোগকারী স্বর্ণ ব্যবসায়ী চন্দন মাজীর দাবি, নোট বাতিলের সময় দাসপুর থানার ওসি প্রদীপ রথ সহ চারজন তাঁর কাছ থেকে প্রচুর সোনা কিনতে চান। পুরনো নোটে সোনা বিক্রি করলে পরে দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার টোপ দেওয়া হয়। অভিযোগ, ওইভাবে সোনা বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ৩৭৫ গ্রাম সোনা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
সেই মামলাতেই সোমবার ভারতী-ঘনিষ্ঠ প্রদীর রথকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এই নিয়ে এই মামলায় গ্রেফতার হলেন ৪ পুলিশ আধিকারিক। আদালত সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ায় বিকেলেই ধৃতকে নিয়ে কলকাতা রওনা হন গোয়েন্দারা।