কলকাতা: সরকারি স্কুলে লাগাতার ক্লাস বন্ধের জের। পিছিয়ে দিতে হল দশম শ্রেণি পর্যন্ত একাধিক পরীক্ষা। আজ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। প্রশ্ন উঠছে, এটা কি সিলেবাস না শেষ হওয়ারই পরিণতি?


প্রসঙ্গত, গতকালই শিক্ষামন্ত্রী পার্য চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ক্লাস হবে না বলে কি পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় নাকি? কার্যত গতকাল তিনি বাড়িতে বসে পড়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন।

শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বললেও বুধবার একগুচ্ছ পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ!

নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম সামেটিভ মূল্যায়ণ হওয়ার কথা ছিল এপ্রিল মাসে।
পর্ষদের নির্দেশ, এই পরীক্ষা ১৩ জুন থেকে ২২ জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে।
দ্বিতীয় সামেটিভ মূল্যায়ণ অগাস্টে হওয়ার কথা। এই পরীক্ষা শেষ করতে হবে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তৃতীয় সামেটিভ মূল্যায়ণ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে পর্ষদ।
লাগাতার ক্লাস বন্ধের জেরে পিছোচ্ছে দশম শ্রেণির পরীক্ষাও।

স্কুলগুলিকে প্রথম সামেটিভ মূল্যায়ণ ১৩ জুন-২২ জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে। ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় সামেটিভ মূল্যায়ণ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে পর্ষদ।
দশম শ্রেণি পর্যন্ত তৃতীয় সামেটিভ মূল্যায়ণ শেষ করতে হবে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে।
ক্লাস চলাকালীন যে যে ফর্মেটিভ মূল্যায়ণ হয়, তাও পরিবর্তন হবে বলে জানিয়েছে পর্ষদ।

শিক্ষামহলের একাংশের প্রশ্ন, লাগাতার ক্লাস বন্ধের জেরে সিলেবাস শেষ হবে না, এই আশঙ্কা থেকেই কি পিছিয়ে দেওয়া হল পরীক্ষা?
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর সুর শোনা গিয়েছে পর্ষদ প্রশাসকের গলাতেও!

ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেমন পড়াশোনা করেছে, বাড়িতেও তেমন করেছে।

পর্ষদ প্রশাসক কিম্বা শিক্ষামন্ত্রী, যতই বাড়িতে পড়ার কথা বলুন, তাতে ভিন্নমত পোষণ করছেন অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ!

যদিও অভিভাবক ও শিক্ষকেরা এবিষয় ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁরা মনে করেন, বাড়িতে থাকলে ছেলেমেয়েরা একদমই পড়ে না। স্কুলের চাপটা দরকারই। সিংহভাগ শিক্ষকই মনে করেন, বাড়িতে বসে পড়া কখনও স্কুলের ক্লাসের বিকল্প হতে পারে না!

দীর্ঘদিন স্কুলে না এলে, বাড়িতে থাকলে, পড়ুয়াদের শৃঙ্খলা হারিয়ে যায়। ক্লাসগুলির প্রয়োজন। স্কুলগুলো তো এই জন্য তৈরি হয়েছে।

প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জেরে এখন সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে পড়ুয়া নেই। ছুটির আমেজে ফাঁকা ক্লাসরুম। কিন্তু স্কুলে যেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। ক্লাস নেই, অগত্যা স্টাফ রুমে সময় কাটিয়েই বাড়ি ফিরছেন তাঁরা।

শিক্ষামহলের অনেকেই বলছেন, সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে যদি এ ভাবে পড়াশোনা শিকেয় তুলে টানা ছুটির হাওয়া বয়, তা হলে কী ভাবে সিলেবাস শেষ হবে?
শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, সিলেবাস শেষ হবে। অসুবিধে হবে না, শিক্ষকদের ওপর আস্থা আছে।

শিক্ষামন্ত্রী যাঁদের ওপর আস্থা রাখছেন, তাঁদের অনেকেই আবার অন্য আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন!

জোর করে না হয় সিলেবাস শেষ করে দিলাম..কিন্তু মেয়েরা নিতে পারবে তো?

সূত্রের খবর, গরমের সময় ক্লাস বন্ধ রাখার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বেসরকারি স্কুলগুলির কাছেও আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু সিলেবাস শেষ করতে হবে বলে, সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি তারা। শিক্ষামহলের অনেকেই বলছেন, বেসরকারি স্কুলগুলি যা পারে, সরকারি স্কুলগুলি কেন তা পারে না? কেন দূর করা যাচ্ছে না এই ছুটির সংস্কৃতি?