কলকাতা: মানসিকভাবে অসুস্থতা থেকেই ৩ বছর ধরে ফ্রিজারে মায়ের মৃতদেহ সংরক্ষণ করেছিলেন ছেলে। বেহালাকাণ্ডে তেমনই অনুমান পুলিশের। এসএসকেএমে শুভব্রতকে পরীক্ষা মনোবিদদের। পাভলভে পাঠানোর নির্দেশ আদালতের।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ এসএসকেএমের ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিতে আনা হয় শুভব্রতকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ধৃতের সাইকোমেট্রি পরীক্ষা করা হয়। পুলিশের সামনে পরীক্ষা করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনোবিদরা। তাঁদের অনুমান, মানসিক রোগের পাশাপাশি স্কিত্‍‍জোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত শুভব্রত। ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির ডিরেক্টর প্রদীপ সাহা বলেন, নন অ্যাসোসিয়েটিভ সাইকোটিক ডিসঅর্ডার ট্রেন্ডিং টুয়ার্ডস স্কিত্‍‍জোফ্রেনিয়া।
এদিন আলিপুর আদালতে তোলা হলে শুভব্রতর মানসিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যাপারে আর্জি জানায় পুলিশ। ধৃতকে জামিন দেওয়ার পাশাপাশি, পাভলভ হাসপাতালে রেখে শুভব্রতর চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
পাশাপাশি পুলিশের দাবি, ইন্টারনেট ঘেঁটে তথ্য জোগাড় করা থেকে বিদেশি ভাষার বই পড়া। মানুষের মৃতদেহ সংরক্ষণ সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে রীতিমতো গবেষণা চালিয়েছেন শুভব্রত মজুমদার।
পুলিশ সূত্রে খবর, ৮৪ বছরের বীণা মজুমদারের মৃতদেহ উদ্ধারের সময় ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছে, চিকিৎসা শাস্ত্র ও অ্যান্যাটমি বা শারীরবিদ্যা সংক্রান্ত অসংখ্য বই। বেশ কিছু বই বিদেশি ভাষায় লেখা। ওই সব বই পড়ার পাশাপাশি, কীভাবে মানুষের মৃতদেহ সংরক্ষণ করা যায়, তা জানতে ইন্টারনেট ঘেঁটে তথ্য জোগাড় করতেন শুভব্রত। এনিয়ে রীতিমতো গবেষণা করতেন তিনি। মৃতদেহ সংরক্ষণ সম্পর্কে শুভব্রতর জ্ঞান কোনও বিশেষজ্ঞের থেকে কম ছিল না বলে দাবি তদন্তকারীদের। তাঁর বিশ্বাস ছিল, মা একদিন বেঁচে উঠবেন।
শুধু বিদেশি ভাষার বই পড়াই নয়, পুলিশ সূত্রে খবর, শুভব্রতর দাবি করেছেন, বিদেশি দূতাবাস থেকে এবিষয়ে তিনি নির্দেশও পেতেন। প্রদীপ সাহা বলেন, মাকে বাঁচানো নিয়ে জার্মান ও রাশিয়ার দূতাবাস থেকে নির্দেশ পেতেন। তাদের কথা শুনতে পেতেন। ভাবতেন এসব করলে মা বেঁচে যাবেন। বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে।
তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, তাঁর ইচ্ছে ছিল, মা বেঁচে ওঠার পর তাঁর সংরক্ষণ পদ্ধতির পেটেন্ট নেবেন। পুলিশ জানতে পেরেছে, তিন বছর আগে মায়ের মৃত্যু হলেও এতদিন ধরে তাঁর পেনশনের টাকা তুলেছেন ছেলে। শুভব্রতর বাবারও দাবি, ছেলে মায়ের পেনশন তুলত।
পুলিশ সূত্রে খবর, কীভাবে তা সম্ভব হল তা জানার জন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলা হলেও সদুত্তর মেলেনি। যদিও মায়ের পেনশন তোলার কথা অস্বীকার করেছেন ধৃত। মৃত বীণা মজুমদারের মৃতদেহ স্বামীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও এদিন তা দেওয়া হয়নি। শনিবার দেওয়া হতে পারে।