কলকাতা: রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি। তিনি চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রাজভবনের তরফে জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া নিয়ে ওয়াকিবহাল রাজ্যপাল। তিনি আক্রান্তদের উপযুক্ত চিকিৎসা ও এই ধরনের রোগ প্রতিরোধে সরকারকে সবরকম ব্যস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন চিঠিতে।


এরই মধ্যে ডেঙ্গি নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি। পথে বিরোধীরা। আদালতে মামলা। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। এ সবের মধ্যেই অব্যাহত মৃত্যু। কেষ্টপুর থেকে কসবা, সল্টলেক, দেগঙ্গা থেকে স্বরূপনগর, সর্বত্রই আতঙ্কের ছবি। একাধিক ক্ষেত্রে জ্বরে মৃত্যু হলেও, ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ না থাকাকেই হাতিয়ার করছে বিরোধীরা।

কেষ্টপুরে মৃত্যু হয়েছে লক্ষ্মী ঘোষ নামে এক গৃহবধূর। পাঁচ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন গৃহবধূ লক্ষ্মী ঘোষ। পরিবারের দাবি, ডেঙ্গি হয়েছিল তাঁর। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টেও তার উল্লেখ রয়েছে। শুক্রবার সকালে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় বধূর।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও উদ্বেগের ছবি। স্বরূপনগরে জ্বরে মৃত্যু হয়েছে টুম্পা সরকার নামে এক বধূর। জ্বর নিয়ে তিন দিন ধরে স্বরূপনগরের সারাপুল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভর্তি ছিলেন টুম্পা। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় অবস্থার অবনতি হলে, বসিরহাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পথে মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবারের দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ থাকলেও বসিরহাট জেলা হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকিটে ডেঙ্গির উল্লেখ করা হয়নি। দেগঙ্গায় জ্বরে মৃত্যু হয়েছে আরও দু’জনের। মৃতদের মধ্যে একজন আকলিমা বিবি। অপরজন আকবর মণ্ডল।

পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে এ বছর ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। আক্রান্ত বহু। তা সত্বেও শহরের বিভিন্ন জায়গায় জমে আছে আবর্জনা। এনিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে পুরসভার চাপানউতোর তুঙ্গে। অন্যদিকে, মেদিনীপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের পালবাড়ি এলাকায় বাসন্তী বটব্যাল ও মমতা গিরি নামে দুই মহিলা জ্বর নিয়ে ভর্তি হাসপাতালে। ঝাড়গ্রামে গত ১১ মাসে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ২৫। এই প্রেক্ষিতে সচেতনতা বাড়াতে শুক্রবার পথে নামে বেলিয়াবেড়ার বিডিও, বিএমওএইস সহ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা।

ডেঙ্গি মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন, এই অভিযোগে শুক্রবার বর্ধমান শহরে সিএমওএইচের অফিসে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন বিজেপির যুব মোর্চার। অন্যদিকে, সচেতনতা বাড়াতে পথে জেলার লোকশিল্পীরা।

জেলার পাশাপাশি কলকাতাতেও উদ্বেগের ছবি। যেমন কসবার টেগোর পার্কের মুখোপাধ্যায় পরিবার। বাবা সুবীর মুখোপাধ্যায় ও মেয়ে ঈশিতা, দু’জনেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। কসবার টেগোর পার্কেরই বাসিন্দা, কুলদীপ কউর গিল ও তাঁর ছেলে বীরেন্দ্র সিংহ দু’জনেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। বাড়িতে তাঁদের চিকিৎসা চলছে।

সল্টলেকের সিসি ব্লকেও ডেঙ্গির প্রকোপ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের এই আবাসনের অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। যেমন বছর চব্বিশের দীপঙ্কর ভৌমিক।

ডেঙ্গি এভাবে ছড়িয়ে পড়ায় কটাক্ষের সুর বিরোধীদের গলায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘রাজ্যে ডেঙ্গিতে লোক মরছে আর আপনি মুম্বইয়ে হাওয়া খাচ্ছেন।’ পাল্টা তৃণমূল অবশ্য দাবি করছে, ডেঙ্গি মোকাবিলায় কাজ করছে রাজ্য সরকার, আর মিথ্যা দোষারোপ করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে বিরোধীরা।