কলকাতা: স্বাস্থ্যভবন। ডেঙ্গি রোধের যাবতীয় পদক্ষেপ এখান থেকেই নেওয়ার কথা, অথচ সেই স্বাস্থ্য ভবনেই তিন-তিনটি জায়গা থেকে পাওয়া গেল মশার লার্ভা! ডেঙ্গির যেমন রয়েছে, তেমনই পাওয়া গিয়েছে ম্যালেরিয়ার মশার লার্ভাও! ডেঙ্গি সংক্রমণ কার্যত মহামারীর চেহারা নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
এদিন সকালে পুর আধিকারিক ও কর্মীদের নিয়ে স্বাস্থ্যভবন পরিদর্শনে যান বিধাননগর পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ। ন্যাশনাল হেলথ মিশনের অফিসের পিছনের দিকে যেতেই তাঁদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! প্লাস্টিকের চায়ের কাপ, রঙের কৌটো থেকে থার্মোকলের প্যাকেট! কী নেই! সব জায়গাতেই জলে খেলে বেড়াচ্ছে মশার লার্ভা!
পরিদর্শন চলাকালীন পুর আধিকারিকরা জানতে পারেন, স্বাস্থ্য ভবনের জেনারেটর রুমের পাশে যে ভ্যাট রয়েছে, তা দীর্ঘদিন পরিস্কার হয়নি। সেখানে গিয়েও সত্যি হল আশঙ্কা! দেখা গেল জমা জল! নিশ্চিন্তে বেড়ে উঠছে মশার বংশধররা!!
এরপরের গন্তব্য ছিল স্বাস্থ্যভবন চত্বরেরই স্বাস্থ্যসাথী বিল্ডিং। সামনেটা ঝাঁ চকচকে। কিন্তু পিছনে ভাঁড়ের ছড়াছড়ি! সেখানেও যা পরিস্থিতি তাতে, লম্বা হচ্ছে মশার বংশলতিকা!
সব জায়গা থেকেই নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি স্প্রে করা হয়। তবে ডেঙ্গি মোকাবিলার প্রশ্নে, স্বাস্থ্যভবনের অন্দরের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যাঞ্জক নয়, তা পুরসভার বক্তব্যেই কার্যত স্পষ্ট।
সূত্রের খবর, গতবারও স্বাস্থ্যভবনের ভিতর ডেঙ্গির মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল! এবার ছবিটা বদলাল না! কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যেখান থেকে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার খুঁটিনাটি নিয়ন্ত্রিত হয়, সেখানকারই এই হাল কেন?
প্রতিক্রিয়া জানার জন্য, স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি।
আগে বড় সময়ের ব্যবধানে এ রাজ্যে দেখা মিলত ডেঙ্গির। কিন্তু ২০০৫ সালের পর থেকে ক্রমেই বাড়ছে রোগের প্রাদুর্ভাব। সরকারি হিসেবই বলছে, গত ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭৬।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই সংখ্যাটা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়! কারণ, বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ডেঙ্গি আক্রান্ত মানে, তাঁর ১ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে ন্যূনতম ১০ হাজার মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়ায়।
তাই তাঁরা যদি একটু অসতর্ক হন, তাহলেই ডেঙ্গি-ভাইরাস তাঁদের কাবু করে ফেলবে! এই প্রেক্ষিতেই আশঙ্কার সুরে প্রশ্ন এবার কি তাহলে মহামারীর আকার নিতে পারে ডেঙ্গি?
ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অরিন্দম কর বলেন, প্রত্যেক বছর যে পরিমাণ ডেঙ্গি হচ্ছে। সচেতনতা না বাড়ালে আমরা কার্যত বিস্ফোরণের মুখে দাঁড়িয়ে। নিঃশব্দে সবার মধ্যে ছড়াচ্ছে।
এই পরিস্থিতির জন্য, জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম কারণ। কারণ, একটানা মুষলধারে বৃষ্টি হলে ধুয়ে যায় মশার ডিম। কিন্তু সেটা এখন হচ্ছে না। ছিটে ফোঁটা বৃষ্টিতে বিভিপ্তভাবে জল জমে থাকছে। তাতেই বেড়ে উঠছে মশার লার্ভা!
রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় যে বিপুল পরিমাণ নির্মাণকাজ হচ্ছে, তাকেও দায়ী করছেন চিকিৎসকরা! কারণ, অধিকাংশক্ষেত্রেই দেখা যায়, যেখানে নির্মাণকাজ হয়, তার আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় জল জমে থাকে।
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা যেমন আছে, তেমনই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভূমিকা প্রশ্ন উঠছে। খোদ স্বাস্থ্যভবনেই পাওয়া গিয়েছে ডেঙ্গির লার্ভা! কলকাতা সংলগ্ন পুরসভার ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। তাই প্রতিরোধে খামতি থাকলে ডেঙ্গি-আশঙ্কা আরও জোরালো হবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।