কলকাতা: অবশেষে কাটল জট। দীর্ঘকালীন ছুটিতে পাঠানো হল জিডি বিড়লার অধ্যক্ষাকে। স্কুলের দায়িত্বে ভাইস-প্রিন্সিপাল ও কো-অর্ডিনেটর। বৃহস্পতিবার থেকেই খুলছে সিনিয়র বিভাগ। পরশু থেকে জুনিয়র সেকশন।


অভিভাবক ফোরামের সঙ্গে স্কুল কর্তৃক্ষের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে--




  • ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচাগার তৈরি করা হবে।

  • স্কুলের মধ্যে সিসিটিভি বসানো হবে।

  • স্কুল বাসেও থাকবে সিসিটিভি, জিপিএস।

  • স্কুল বাসে থাকবেন মহিলা অ্যাটেনডেন্ট।


বিকেল থেকে শুরু হওয়া টানাপোড়েন। অধ্যক্ষাকে সরানো নিয়ে অভিভাবক-কর্তৃপক্ষ বৈঠক, অভিভাবকদের মধ্যে মতানৈক্য, দফায় দফায় ঘোষণার পর সর্বশেষে গোটা অধ্যায়ের ওপর ইতি পড়ে রাতে।


তখন রাত আটটা। স্কুলের মধ্যে অভিভাবক-কর্তৃপক্ষ বৈঠক তখনও চলছিল। ভিতর থেকে এক অভিভাবক বেরিয়ে এসে ঘোষণা করেন, কাল থেকে প্রিন্সিপাল থেকে থাকছেন না। তাঁকে 'অপসারণ' করা হবে। কাল থেকে স্কুল খুলছে। এই খবরে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন অভিভাবকরা। কিন্তু, সেই আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই সিদ্ধান্তের লিখিত বয়ান নিয়ে শুরু হয় জটিলতা। স্থায়ী ভাবে বরখাস্ত, না তদন্ত চলাকালীন ছুটিতে? তা নিয়ে নতুন করে কর্তৃপক্ষ-অভিভাবক শুরু হয় বাদানুবাদ। অধ্যক্ষার স্থায়ী অপসারণ চান অভিভাবকরা। অন্যদিকে, স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি করে, তদন্ত চলাকালীন স্থায়ী অপসারণ সম্ভব নয়।


অবশেষে রাত ১০টা নাগাদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক সেরে স্কুল থেকে বেরিয়ে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিভাবক ফোরাম। সেখানে বলা হয়, কাল থেকে স্কুল খুলবে। দায়িত্ব থেকে আপাতত অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অধ্যক্ষাকে। আমরা খুব খুশি।
বৈঠক শেষে শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, দীর্ঘক্ষণ বাকবিতণ্ডার পরে আমরা জয়ী হয়েছি। এটা সত্যের জয়, আন্দোলনের নৈতিক জয়। এখন স্কুল চালাবেন ভাইস প্রিন্সিপাল।


কিছুক্ষণের মধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলন করেন জিডি বিড়লা স্কুলের মুখপাত্র সুভাষ মোহান্তি। বলেন, অধ্যক্ষাকে দায়িত্ব থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। স্কুলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না অধ্যক্ষা। ভাইস প্রিন্সিপাল ও একজন কো-অর্ডিনেটর এখন স্কুলের দায়িত্ব সামলাবেন।
মোহান্তি জানান, বৈঠকে অভিভাবকদের মতকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, অধ্যক্ষাকে কেন অপসারণ করা হল না, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মোহান্তি বলেন, অধ্যক্ষাকে অপসারণ দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। অপসারণ হতেও পারে, নাও হতে পারে। তিনি যোগ করেন, অধ্যক্ষাকে সরানোর কোনও কারণ ছিল না। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষাকে অন্য কোথাও দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না সেটা পরবর্তী ক্ষেত্রে দেখা হবে।


যদিও, এর পাশাপাশি, অধ্যক্ষার হয়ে সওয়ালও করেন মুখপাত্র। বলেন, সেরকম তো কিছু ভুল করেননি। অধ্যক্ষার মর্যাদা যেন বজায় থাকে, সব প্রতিষ্ঠানই নজর রাখে। তাঁর দাবি, অভিভাবকদের দাবি মেনেই আপাতত তাঁকে দায়িত্ব থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একজন মহিলার জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে, সেটা হয় না। স্কুলের পক্ষে যেটা ভাল সেটাই হয়েছে। অবশেষে বুধবার অভিভাবক-স্কুল কর্তৃপক্ষের বৈঠকে গলল বরফ। ৬ দিন পর কাটল জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনের অচলাবস্থা! স্কুল খোলার খবরে খুশি পড়ুয়ারাও।


বৈঠক শেষের ঘোষণা শুনুন:



যদিও, এদিন বিকেলের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। অবিলম্বে স্কুল খোলার দাবিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। তাঁদের বক্তব্য, সামনেই আইএসসি এবং আইসিএসই বোর্ডের পরীক্ষা রয়েছে। এই অবস্থায় দ্রুত স্কুল খোলা খুবই জরুরি বলে আবেদনে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। এছাড়াও স্কুল খোলার ক্ষেত্রে সিলেবাস শেষ না হওয়া এবং প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস না হওয়ার কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। স্কুলে পরীক্ষার মহড়া নেওয়াও প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন আবেদনকারীরা।


জবাবে, ফোরামের সদস্যরা তাঁদের উদ্দেশে একটু ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করেন। তাঁরা বলেন, একটু মানবিক হোন। যে অভিভাবকরা স্কুল খোলার পক্ষে, তাঁরা একটু ধৈর্য ধরুন, অভিভাবকদের একাংশের কাছে দাবি অন্য অংশের।
দ্রুত স্কুল খোলার পক্ষে পাল্টা দাবি অপর পক্ষের। তাঁদের মতে, সব দাবি একসঙ্গে পেশ করা সম্ভব নয়। যদিও আরেক পক্ষ জানিয়ে দেয়, আমরা আগের দাবি থেকে সরছি না। অধ্যক্ষার পদত্যাগ, অপসারণের দাবিতে অনড়। অন্য অংশ বলছে, স্কুল বন্ধ, বাচ্চারা বাড়িতে বসে আছে। বাচ্চারা কাঁদছে, স্কুল খুলুক।


স্কুল খোলা ইস্যুতে আড়াআড়িভাবে ভাগ হয়ে যায় অভিভাবক ও পড়ুয়ারা। এক পক্ষ দাবি করে আগে অধ্যক্ষাকে সরাতে হবে। আরেকপক্ষ দাবি ছিল, প্রথমে স্কুল খুলতে হবে। তারপর বাকি সব কিছু।  অভিভাবকদের একাংশ যখন, বৈঠকের জন্য স্কুলে ঢুকতে যাবেন, সেইসময় ক্ষোভ উগড়ে দেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। অভিভাবক ফোরমের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ আসতে থাকে। কিন্ত তাতেও স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। ভিতরে যখন বৈঠক চলছে। তখন বাইরে চলছে তুমুল বিক্ষোভ।


সূত্রের খবর, এরমধ্যে অধ্যক্ষাকে রেখেই স্কুল খোলার প্রস্তাব দেয় কর্তৃপক্ষ। বৈঠক থেকে এই খবর বাইরে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা। তাঁরা বলেন, আমরা মানব না, ওনাকে সরাতে হবেই, দিয়ে স্কুল খুলতে হবে। স্কুলের প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দেওয়া হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রিন্সিপালকে সরানোর দাবি থেকে তারা সরে আসবে না।


জিডি বিড়লাকাণ্ডে প্রিন্সিপালের অপসারণের দাবি ইস্যুতে সকাল পর্যন্ত অধ্যক্ষার পাশে ছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। অশোক গ্রুপ অফ স্কুলের মুখপাত্র জানান, প্রিন্সিপাল অপসারণের সিদ্ধান্ত নির্ভরশীল পুলিশি তদন্তের উপর। যদিও, বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, সরানো হবে প্রিন্সিপালকে।


এদিকে, নির্যাতিতা শিশুটির মেডিক্যাল টেস্ট হয়েছে এসএসকেএম। আজ তার মেডিকো লিগ্যাল টেস্ট ছিল। এটি একটি ফরেনসিক টেস্ট। শিশুটি ঠিক কীভাবে আক্রান্ত হয়েছে তা বিস্তারিতভাবে বোঝার জন্য, যাদবপুর থানার তরফে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে এই পরীক্ষাটি করানোর জন্য আবেদন জানানো হয়।
কমিটি তাদের আবেদন আবেদন মঞ্জুর করে। আলিপুর আদালতের তরফেও এই পরীক্ষা করার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর শিশুটিকে আজ এসএসকেএম-এর ফরেনসিক বিভাগে আনা হয়। এর আগে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই এসএসকেএম-এর প্রসূতি বিভাগে শিশুটির একবার মেডিক্যাল টেস্ট হয়।


এদিকে, জিডি বিড়লাকাণ্ডে গোয়েন্দা নজরে ক্লাস টিচার। এদিন লালবাজারে ক্লাস টিচারকে এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পাশাপাশি, এক আয়া এবং এক নিরাপত্তারক্ষী সহ আরও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।