কলকাতা: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি বাগযুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন বৃহস্পতিবারই এই আইনের প্রতিবাদে কলকাতার রাস্তায় নামলেন বিদ্বজ্জনরা।
মিছিলে পা মেলালেন পড়ুয়ারা।প্রতিবাদে সামিল হল সাধারণ মানুষও।
মোদি সরকারের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপঞ্জির প্রতিবাদে সরব কলকাতা।
বৃহস্পতিবার এই প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয় 'নো এনআরসি মুভমেন্ট' নামে একটি সংগঠন। মূলত সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমেই প্রচার চালিয়েছিল তারা। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে এদিনের কর্মসূচিতে, অংশগ্রহণ করেন সাধারণ মানুষ থেকে বিদ্বজ্জনরা।
দুপুর ১টার সময় রামলীলা পার্ক থেকে শুরু হয় মিছিল...অংশ নিয়েছিলেন প্রচুর সংখ্যক পড়ুয়া।
বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ও জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে মধ্য কলকাতার রামলীলা পার্কে সমবেত হন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষ। অনেকের টি-শার্টে লেখা ছিল নো ক্যাব, নো এনআরসি।
প্রতিবাদ মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনরা।




সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে কলকাতায় এই প্রথম অরাজনৈতিক জনসমাজ রাস্তায় নামল। এতদিন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠন নেমেছে। কিন্তু সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রচারের পর সবাই এসেছেন। সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছে নন্দীগ্রাম পরবর্তী পর্যায়ে কীভাবে মানুষ পথে নেমেছিলেন।
নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন বলেছেন, যেখানে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে পথে নামে সেই আন্দোলন যে কোনও রাজনৈতিক আন্দোলনের চেয়ে জোরাল হয়। তিনি বলেছেন, এটা একটা দীর্ঘ লড়াই। এই আইন রদ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
অভিনেত্রী ও পরিচালক অপর্ণা সেন বলেছেন, আমাদের উপমহাদেশে রয়েছে বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, জাতি-সম্প্রদায়। ধর্মনিরপেক্ষতার সুতোয় তা একসূত্রে বাঁধা। এই সুতো ছিঁড়ে দিলে দেশটাই ভেঙে যাবে।
রামলীলা পার্ক থেকে এস এন ব্যানার্জী রোড হয়ে সোজা ধর্মতলার দিকে এগোয় মিছিল। ছিলেন অভিনেত
ঋদ্ধি সেন, অভিনেত্রী সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ধর্মতলায় পৌঁছনোর আগেই কলকাতা পুরসভার সামনে, ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকায় পুলিশ।
সেখানেই জমায়েত করে, শুরু হয় স্লোগান...শাউটিং...।

সাধারণ মানুষ ও বিদ্বজ্জনরা যখন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে পথে নেমে মোদি সরকার এবং বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা সুর চড়িয়েছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সত্যিকারের নাগরিক কারা ও কারা বিদেশ থেকে ঢুকে উত্পাত করছে, তা চিহ্নিত করার জন্য এই আইন ও এনআরসি।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দিল্লি সহ বিভিন্ন জায়গায় কংগ্রেস ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছে বিরোধীরা।
বৃহস্পতিবার কলকাতাতেও এই আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে কংগ্রেস।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, এদিন দুপুর ৩টের সময় ধর্মতলায় টিপু সুলতান মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয় প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিবাদ মিছিল।চাঁদনি চক...সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে মিছিল এগোতে থাকে রাম মন্দিরের দিকে।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছনোর পর, রাম মন্দিরের কাছে রাস্তায় বসে পড়েন কংগ্রেস কর্মীরা।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, ভারতের বহুত্ববাদকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
একইদিনে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় আলাদাভাবে পথে নামে বামেরাও। মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত মিছিল করে বামেরা। পার্ক সার্কাস পাঁচ মাথার মোড়ে পথসভাও করে তারা। রাজ্য বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন,
এই আইন কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন শুরু করেছি।এই আইন সংবিধান বিরোধী।
তিনি বলেন, দিল্লিতে যেভাবে আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তা খুবই নিন্দাজনক। এটা মোদির চক্রান্ত। ভারতের মানুষ মানবে না। পুলিশ দিয়ে মিছিল আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে আন্দোলন থামবে না। আন্দোলন চলবে।
তবে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, একই দিনে, একই ইস্যুতে পথে নামলেও বাম কংগ্রেসের রমিছিল আলাদা কেন? কয়েকদিন আগে যেখানে বিধানসভা উপনির্বাচনে তারা জোট বেঁধে লড়াই করেছে, সেখানে আন্দোলনে আলাদা কেন?