কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ‘দেশবিরোধী’ তকমা দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাদের পিছনে উপাচার্য সুরঞ্জন দাশের মদত আছে বলেও অভিযোগ তাঁর। উপাচার্যের ভূমিকা তদন্ত করে দেখার দাবি করেন তিনি।

 

গতকাল সেখানে পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘বুদ্ধ ইন এ ট্রাফিক জ্যাম’ ছবিটি দেখানো নিয়ে সেখানে ধুন্ধুমার কাণ্ড হয়। ছবিটি প্রদর্শনীর অনুমতি বাতিল করা হলে সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে আসা লোকজন ক্ষোভ জানান। যাদবপুরের পড়ুয়াদের অভিযোগ, তখন সেখানে বাইরে থেকে আসা বিজেপির ছাত্র শাখা এবিভিপি সমর্থকরা ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করে। চারজনকে তারা আটকে রাখে। তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তোলে।

 

খবর পেয়ে সেখানে চলে আসে বিজেপি-আরএসএসের লোকজন। হাজির হন বিজেপি নেত্রী রূপা গাঙ্গুলিও। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার খবর পেয়ে ছুটে আসেন উপাচার্যও। তিনি দু পক্ষকেই সংযত করার চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি তাদের হাতে আটক চারজনকে ছাড়িয়ে গেটের বাইরে বের  করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

 

গোটা ঘটনার পিছনে সিপিএম, বামেদের হাত থাকার অভিযোগ তুলে দিলীপবাবু বলেন, ছাত্র অসন্তোষ যাদবপুরের চেনা ছবি হয়ে উঠেছে। সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া একটি ছবির প্রদর্শন বেআইনিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হল। যা কিছু তাদের আদর্শের পরিপন্থী, সেটা দেখানো চলবে না, যাদবপুরের সিপিএম ও বাম সমর্থক পড়ুয়াদের এটাই মানসিকতা। দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর সম্পূর্ণ পরিপন্থী এটা। এর কঠোর নিন্দা করছি। তিনি এও বলেন, যাদবপুর দেশবিরোধী লোকজনেক ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। সেখানকার বাম ছাত্র ইউনিয়নগুলি দেশবিরোধী শক্তির আঁতুরঘর। সেজন্য কিছুদিন আগে সেখানে এক শ্রেণির পড়ুয়া দেশবিরোধী স্লোগান দিয়েছিল।

 

তিনি হুঁশিয়ারি দেন, আমরা  যাদবপুরের ক্যাম্পাসে কী হচ্ছে, সে ব্যাপারে  কেন্দ্রকে অবহিত করব।

যদিও বিজেপি রাজ্য সভাপতির এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাল্টা কোনও মন্তব্য করতে চাননি উপাচার্য। তিনি বলেছেন, আমাকে নিয়োগ করেছে আচার্য, তাঁকে আমি রিপোর্ট দেব। এই ধরনের মন্তব্যের জবাব দেব না। যদিও বিজেপির বিরুদ্ধে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা, শিক্ষায় সাম্প্রদায়িক অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি।

 

এর আগে জেএনইউকাণ্ডের সময়েও স্লোগান-বিতর্কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের হুমকি দিতে গিয়ে শালীনতার সীমা ছাড়িয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, স্লোগানবাজি চলছে। বাইরে বেরিয়ে দেখ। জুতিয়ে সিধে করে দেব। চোদ্দ পুরুষের নাম ভুলিয়ে দেব, পাকিস্তানের স্লোগান দেবে, কাশ্মীর নিয়ে আন্দোলন করবে!

 

বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন, শুক্রবার অনুমতি বাতিলের পরও কেন ক্যাম্পাস চত্বরে সিনামার প্রদর্শন করল এবিভিপি? আর তাতে আপত্তি তোলাতেই কি ফের বিজেপি রাজ্য সভাপতির রোষানলে পড়ে গেল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়? সেজন্যই কি ‘দেশ বিরোধী কার্যকলাপের আখড়া’ হয়ে উঠল যাদবপুর? কটাক্ষের সুরে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেএনইউ, সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই কি কানহাইয়া কুমারদের মতো গায়ে লেগে যাবে দেশদ্রোহী তকমা? এবিভিপির বিরোধিতা করা মানেই কি দেশদ্রোহিতা?

 

 

 

এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া জানান নিচের কমেন্টস বক্সে