নয়াদিল্লি ও কলকাতা: সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করবেন, এমনই স্বপ্ন বাসিন্দা বছর ৪০-এর জুডিথ ডি’সুজার। সেইমতো ২০১৫-র জুলাইয়ে যোগ দেন কাবুলের আগা খান ফাউন্ডেশনে। সেখানেই অপহৃত কলকাতার মেয়ে জুডিথ ডি’সুজা!


 

আড়াই মাস আগে বাড়ি এসেছিলেন জুডিথ। ফোন করে জানিয়েছিলেন, আগামী বুধবার আফগানিস্তান থেকে ফের বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার মাঝরাতে কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসের একটি ফোনে পুরোপুরি বদলে যায় বাড়ির পরিস্থিতি!

 

পরিবার সূত্রে দাবি, তাঁরা জানতে পেরেছেন, কাবুলের তৈমানি এলাকা থেকে জুডিথকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহৃত জুডিথের মা জানিয়েছেন, ছোট থেকে খুব সাহসী ছিল জুডিথ। বলত, কাবুলের মতো জায়গায় কাজ করতে ওর কোনও সমস্যা হয়নি।

 

ছোটবেলা থেকেই ডাকাবুকো এবং স্বাধীনচেতা মেয়েটি। লরেটো ডে স্কুলে পড়াশোনার পর ইংরেজী বিষয় নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। সামাজিক কাজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

 

২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন নামী-বেনামী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে লিঙ্গ বৈষম্য, দারিদ্র্য, পরিবেশ সংরক্ষণ প্রভৃতি সামাজিক সমস্যা নিয়ে কাজ করেছেন। যুক্ত ছিলেন ইন্টারন্যাশানাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভলপমেন্ট, এমএস স্বামীনাথন রিসার্চ ফাউন্ডেশন অ্যান্ড গ্রাম বিকাশ, ওড়িশা প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে। ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ওপর তাঁর বেশ কিছু গবেষণামূলক কাজও রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সম্প্রতি কাজ করছিলেন তিনি।

 

কাবুল পাড়ি দেওয়ার আগে ১৫ বছর এদেশেরই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু, ওড়িশা প্রভৃতি জায়গায় সমাজ এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। একটা সময় স্বাধীন পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করেছে। দেশ বিদেশের বেশ কিছু সংগঠনের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ভারতীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রক, বিভিন্ন বিদেশী সংগঠন যেমন- মালয়েশিয়ার ওয়ার্ল্ড ফিস, আফগানিস্তানের আইএফএডি এবং ইন্টারন্যাশানাল সেন্টার ফর এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইন ড্রাই এরিয়াস প্রভৃতির সঙ্গে কাজ করেছেন। কর্মসূত্রে থেকেছেন বাংলাদেশ, নেপাল-সহ একাধিক দেশে।

 

বাড়ি ছেড়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে কাজ করতেও পিছপা হননি। কাজ ছিল প্রাণের চেয়ে প্রিয়। কাবুলের সেই কর্মক্ষেত্র থেকেই অপহৃত কলকাতার মেয়ে জুডিথ ডি’সুজা! যে মেয়ে কাজের সুবাদে একসময় বিভিন্ন দেশ চষে ফেলেছেন, সেই মেয়ের এমন পরিণতি মানতে পারছে না পরিবার! সিআইটি রোডের এই বাড়িতে এখন চরম উদ্বেগ।

 

মা-বাবার শরীর যে ভাল নয়, জানতেন জুডিথ। নিয়ম করে ফোনে খবর নিতেন। ছুটি পেলেই ছুটে আসতেন এন্টালির বাড়িতে। ঘরে ফিরেই হই-হুল্লোড়। মা-বাবা-দিদিকে নিয়ে ঘুরতে বেরনো, খাওয়া-দাওয়া। বুধবারও জুডিথ বাড়ি ফিরলে এমনই হইচই হবে বলে আশায় ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু মেয়ে আসার আগেই এল মেয়ের অপহৃত হওয়ার খবর।