কলকাতা: ভাল চাকরির স্বপ্ন চোখে নিয়ে রিয়াধ পাড়ি দিয়েছিলেন। চাকরি তো হয়ইনি, অভিযোগ, এক আরব শেখের উটের ফার্মে কাজ করতে হয়েছে দাস হিসেবে।


হ্যাঁ, এই একুশ শতকেও খোদ কলকাতার এক অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারকে সৌদি আরবে যে মধ্যযুগীয় অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তা স্তম্ভিত করে দেয়। তবে তাঁর দুঃসময় শেষ হয়নি এখনও, অসহায় পরিজনরা বিদেশ মন্ত্রকের শরণাপন্ন হয়েছেন।

জয়ন্ত বিশ্বাস নামে ওই অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার ভাল কাজের খোঁজে এ বছরের শুরুতে যোগাযোগ করেন দিল্লি ও মুম্বইয়ের কয়েকজন দালালের সঙ্গে। একলাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবের অটোমোবাইল শিল্পে তাঁকে লোভনীয় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখায় তারা। এরপর পর্যটক ভিসায় তাঁকে তুলে দেয় রিয়াধগামী একটি বিমানে। আশ্বাস দেয়, ৩ মাস সেখানে থাকলে ওয়ার্ক ভিসা পেয়ে যাবেন, মিলবে চাকরিও। ১৫ মে রিয়াধ নামেন জয়ন্ত। তারপরেই দুঃস্বপ্নের শুরু।

জয়ন্তর দিদি গৌরীর অভিযোগ, চাকরি তো তাঁর ভাই পানইনি, উল্টে তাঁকে বেচে দেওয়া হয় এক আরব শেখের উটের ফার্মে, দাস হিসেবে। তাঁকে সেখানে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়, দিনে একবার খাবার দেওয়া হত। জয়ন্তকে কিনে নেওয়া শেখটি নাকি একবার তাঁকে যৌন নির্যাতনেরও চেষ্টা করে। তিনি পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। জোটে প্রচণ্ড মারধর।

পরে অবশ্য জয়ন্ত পালিয়ে যোগাযোগ করেন রিয়াধের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে। তারা তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু তাঁর উটের ফার্ম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত সৌদি ‘মালিক’ পুলিশে অভিযোগ করে, জয়ন্ত নাকি ১০,০০০ রিয়াল বা সৌদি অর্থ চুরি করে পালিয়েছেন। এরপর তাঁর জায়গা হয় সৌদির জেলে।

সেখান থেকে কোনওভাবে কলকাতায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন জয়ন্ত। তখনই তাঁর এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারে তাঁর পরিবার। যে দালালরা তাঁকে রিয়াধ পাঠিয়েছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁর বাড়ির লোকেরা। তারা এবার তাঁর মুক্তির দাম ৩৫,০০০ টাকা ধার্য করে। সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পর ২৭ অক্টোবর জেল থেকে ছাড়া পান তিনি।

তবে জেলের বাইরে এলেও কবে তিনি ফিরতে পারবেন তা পরিষ্কার নয়। জয়ন্তর বাবা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ছেলেকে ফিরিয়ে আনার আবেদন করে চিঠি লিখেছেন বিদেশমন্ত্রকে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন তাঁরা। তবে এখনও উত্তর আসেনি।