কলকাতা: এই শহরের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ওতপ্রোত। রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পই হোক বা তপন সিংহর সিনেমা- আফগান কাবুলিওয়ালাদের তিলোত্তমা কবেই আপন করে নিয়েছে। পুরনো কলকাতার রাস্তাঘাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত দেখা যায় এঁদের। সকলেই জানেন, দরকারে, অদরকারে টাকা পাওয়া যায় এঁদের কাছ থেকে। সুদের কারবারে টাকা খাটান এই কাবুলিওয়ালারা। বছর শেষে সব পাওনাগণ্ডা বুঝে নিয়ে পাড়ি দেন সুদূর আফগানিস্তানে।


কিন্তু ৫০০ ও ১,০০০ টাকার নোট বাতিলের পর কলকাতার এই কাবুলিওয়ালাদেরও পকেটে টান পড়েছে। বরাবর যাঁরা টাকা ধার দিয়ে এসেছেন, তাঁদের এখন খাওয়ার পয়সাটুকুও নেই। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, আর নতুন করে ঋণ দেওয়া তো দূরের কথা, যা দিয়েছেন, তাও উদ্ধার করা যাবে কিনা, বুঝতে পারছেন না তাঁরা।

এই কাবুলিরা অনেকেই কয়েক প্রজন্ম ধরে বাস করছেন এই শহরে। আগে এঁদের পূর্বপুরুষদের ছিল আতর, পেস্তা, কিসমিস, হিং ও কার্পেটের ব্যবসা। এখন তা শুধু সুদের কারবার। কাবুলিরা জানাচ্ছেন, যাঁদের টাকা ধার দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা টাকা ফেরত দিতে চান পুরনো নোটে। বেশিরভাগের কাছেই যথেষ্ট ১০০ টাকার নোট বা নতুন ২,০০০ টাকার নোট নেই। কিন্তু পুরনো নোট তাঁদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে ঋণগ্রহীতারা আরও সময় চাইছেন। উল্টোদিকে এখনও হাতে নয়া নোট না আসায় নতুন করে ঋণ দিতে পারছেন না তাঁরা।

এই কাবুলিওয়ালারা ভারতীয় নাগরিক না হওয়ায় এঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে পুরনো নোট বদলে নেওয়ার উপায় নেই এঁদের। যে সব নোট এঁদের কাছে আছে, সবই পুরনো। বদলাতে না পারায় সে সবের কোনও মূল্যও নেই আর। পাশাপাশি কোনও বন্ড বা চুক্তি করে টাকা ধার দেন না এঁরা। পুরোটাই বিশ্বাসের ওপর। ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে।

তা ছাড়া কয়েক বছর ধরেই ব্যবসা মন্দা চলছে এই কাবুলিদের। আগের মত ১০ শতাংশ হারে নয়, সুদ দিতে হচ্ছে ৫ থেকে ৬ শতাংশ হারে। টাকা সব সময় যে শোধ পাওয়া যায় তাও নয়। তার ওপর এই নোট বাতিলের ধাক্কায় পুরো ব্যবসাই ধসে পড়ার উপক্রম।