কলকাতা ও উত্তর দিনাজপুর: মঙ্গলবার সম্পন্ন হল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সদ্যপ্রয়াত কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির শেষকৃত্য। সোমবার রাতে এগারোটা দশ নাগাদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির নিথর মরদেহ আনা হয় কলকাতায়। রাতে তা রাখা ছিল পিস হাভেনে।

মঙ্গলবার সকালে সাড়ে নটা মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর, বিধান ভবনে। প্রায় ঘণ্টা খানেক সেখানে তাঁর মরদেহ রাখা ছিল। প্রিয়রঞ্জন ছিলেন আইনের ছাত্র। কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সদস্য। এ দিন তাঁর মরদেহবাহী শকট যখন হাইকোর্টে পৌঁছয়, তখন সেখানে তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানান আইনজীবীরা। কলকাতা হাইকোর্ট থেকে টালিগঞ্জের রানি ভবানী রোডের বাড়ির সামনে শেষশ্রদ্ধা।
দুপুর তিনটে নাগাদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মরদেহ নিয়ে সেনাবাহিনীর কপ্টার উড়ে যায় তাঁর শিকড়ের দিকে। রায়গঞ্জের উদ্দেশে। শেষযাত্রায় সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী দীপা, ছেলে মিছিল।

মঙ্গলবার, বিকেল চারটে চল্লিশ নাগাদ, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মরদেহ নিয়ে কপ্টার নামে রায়গঞ্জের হেলিপ্যাডে। রাজ্য সরকারের তরফে সেখানে শেষশ্রদ্ধা জানানো হয়। পুলিশ ট্রেনিং গ্রাউন্ডে তাঁকে গান স্যালুট দেওয়া হয়।
মরদেহবাহী শকট ধীরে ধীরে এগোতে থাকে কালিয়াগঞ্জের দাশমুন্সি ভবনের উদ্দেশে। প্রিয় মানুষটাকে শেষবার দেখার জন্য পথের ধারে তখন কাতারে কাতারে মানুষ। সন্ধে ৬টা দশ নাগাদ তেরাঙ্গায় মোড়া কফিন পৌঁছয় কালিয়াগঞ্জে, প্রিয়র বাড়িতে। সেখানেও ভিড়ে ভিড়। স্লোগানে-স্লোগানে, ফুল আর চোখের জলে, চিরবিদায়।
বাড়ি থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কালিয়াগঞ্জে কংগ্রেসের পার্টি অফিসে। সেখান থেকে রায়গঞ্জে দলের জেলা সদর দফতরে। শেষযাত্রায় শেষ গন্তব্য রায়গঞ্জের বন্দর শ্মশান।
মঙ্গলবার সকাল থেকে রায়গঞ্জে জুড়ে ছিল কার্যত বনধের চেহারা।
সালটা ছিল ২০০৮। মহানবমীর রাতে জমজমাট উত্তর দিনাজপুরে কালিয়াগঞ্জের দাশমুন্সি বাড়ি...ঢাকের কাঠি হাতে বোল তুলছেন বাড়ির মেজ ছেলে প্রিয়রঞ্জন। সেই রাতেই ম্যাসিভ স্ট্রোক!
দ্রুত নয়াদিল্লির এইমসে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু, আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি প্রিয়রঞ্জন। পরে তাঁকে এইমস থেকে স্থানান্তরিত করা হয়ে দিল্লিরই ইন্দ্রপ্রস্থের অ্যাপোলো হাসপাতালে।
অসুস্থ হওয়ার থেকে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি আর এক দিনের জন্যও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দীর্ঘদিন ছিলেন কোমায়। জ্ঞান ফিরেছিল ঠিকই, কিন্তু বাকশক্তি বা স্মৃতি আর ফেরেনি।
৯ বছর ধরে লড়াই। পরিবারের সবসময় একটাই প্রার্থনা, মানুষটা যেন সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু, তা আর হয়নি। বিশে নভেম্বর সকালে সব শেষ। দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান সকলের প্রিয় প্রিয়রঞ্জন।
তিনি ছিলেন বাগ্মী...ঝুড় তুলতেন বক্তৃতায়। তিনি ছিলেন লড়াকু নেতা। হাসপাতালের বেডে শুয়েও লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। দীর্ঘ ন বছর ধরে লড়াই করেছেন। কিন্তু, জীবনযুদ্ধে শেষমেশ হার মানতেই হল।