কলকাতা: ঋণের ফাঁস চেপে বসেছে এশিয়ার বৃহত্তম রেডলাইট এলাকা সোনাগাছির ৮৯ শতাংশ যৌনকর্মীদের ওপর। কোভিড-১৯ অতিমারির রুখতে দেশজুড়ে লকডাউন জারি হয়েছিল। সেই সময় কার্যত কর্মহীন দিন কেটেছিল তাঁদের। দৈনন্দিন খরচ চালাতে ধার করতে হয়েছিল। সেই ধার এখন পাহাড়প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের ঘাড়ে। একটি সমীক্ষায় এমনই চিত্র ধরা পড়েছে।
সংবাদসংস্থার খবর অনুযায়ী,  এনজিও অ্যান্টি হিউম্যান ট্র্যাফিকিং অর্গানাইজেশনের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৭৩ শতাংশ যৌনকর্মীই এই পেশা ছেড়ে রোজগারের অন্য উপায় অবলম্বন করতে আগ্রহী। কিন্তু ঋণের ফাঁদে সেই পথ খোলা নেই তাঁদের কাছে। কারণ, মহাজন, কারবারের মালিক, দালালদের মতো ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয়েছে তাঁদের। ফলে আরও বেশি শোষণের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা কালে সোনাগাছির প্রায় ৮৯ শতাংশ কর্মীই এই ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে ৮১ শতাংশই মহাজন, কারবারের মালিক, দালালদের মতো ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা ধার করেছেন। ফলে আরও বেশি শোষণের মুখে পড়েছেন তাঁরা। ৭৩ শতাংশই পেশা ছাড়তে চান। কিন্তু অতিমারীর সময় বেঁচে থাকার জন্য যে বিশাল ঋণের বোঝা তাঁদের ঘাড়ে চেপে বসেছে, তার ফলে ইচ্ছে থাকলেও এই পেশা ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপায় তাঁদের নেই।
সোনাগাছিতে কাজ করেন প্রায় ৭ হাজার আবাসিক যৌনকর্মী। গত মার্চ থেকে তাঁদের কোনও কাজ নেই। ফলে আয়ও নেই। জুলাই থেকে প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ শুরু হয়েছে। এই সমীক্ষার জন্য প্রায় ৯৮ শতাংশ যৌনকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
এনজিও-র ন্যাশনাল ইউথ প্রেসিডেন্ট তপন সাহা জানিয়েছেন, বিপুল ঋণের চাপে এখন আর কোথাও যাওয়ার নেই ওই যৌনকর্মীদের। লকডাউন উঠে গেলেও ওই মহিলারা সংক্রমণের আশঙ্কায় কাজ করতে পারছেন না। এখন রাজ্য সরকারের এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে তাঁদের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্যে এগিয়ে আসার সময় এসেছে।
যৌনকর্মীদের কল্যাণের জন্য কর্মরত সংগঠন দুর্বারের এক পদস্থ আধিকারিক বলেছেন, লকডাউনের সূচনা থেকে যৌন কর্মীরা এখন চূড়ান্ত আর্থিক চাপের মুখে পড়েছেন।
দুর্বারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মাত্র ৬৫ শতাংশ কাজ শুরু হয়েছে। আর্থিক চাপ থাকায় ব্যবসাও স্বাভাবিক হতে পারছে না। যৌনকর্মীদের পরিচালিত একটি সমবায় ব্যাঙ্ক রয়েছে। কিন্তু সবাই এর সদস্য নন। যৌন কর্মীরা মহাজন ও দালালদের কাছ থেকেই ধার নেন। কারণ, এক্ষেত্রে কোনও কাগজপত্রের দরকার পড়ে না।


পশ্চিমবঙ্গের নারী ও শিশু উন্নয়ণমন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংবাদসংস্থাকে তিনি জানিয়েছেন, এ ধরনের সমীক্ষা সম্পর্কে তাঁর জানা নেই। একইসঙ্গে জানিয়েছেন, লকডাউন পর্বে রাজ্য সরকার যৌনকর্মীদের নিখরচায় রেশন সহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
সমীক্ষায় এনজিও-গুলির সমর্থনে নীতিনির্ধারকদের স্থানীয় যৌনকর্মীদের জন্য বিকল্প জীবনধারনের পরিকল্পনা প্রণয়নে এগিয়ে আসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ ত্রান সংক্রান্ত ব্যবস্থার মধ্যেই এই বিকল্প তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সমীক্ষায়।