কলকাতা: প্রভাবশালী তত্ত্বে অনড় থেকেই মদন মিত্রর জামিন খারিজের জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানাল সিবিআই। জানা গিয়েছে, আবেদনপত্রে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছে, মদন মিত্র এখনও শাসক দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি জামিনে মুক্ত থাকলে, সাক্ষীরা ভয় পাবেন, তথ্যপ্রমাণও লোপাট হতে পারে!
জামিনের দিন আদালতে গিয়ে মদনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সূত্রের দাবি, আবেদনপত্রের সঙ্গে পেপার কাটিং জমা দিয়ে, এই বিষয়টিও হাইকোর্টকে জানিয়েছে সিবিআই। যে প্রসঙ্গ শোনা গিয়েছিল সিবিআইয়ের আইনজীবীর মুখেও। প্রাক্তন মন্ত্রীর জামিন খারিজের আর্জির স্বপক্ষে হাইকোর্টে সিবিআই যে সব দাবি করেছে, সেগুলি হল -- নির্দেশনামায় সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের গাইডলাইনের উল্লেখ থাকলেও, সবিস্তার ব্যাখ্যা নেই। পরিস্থিতির কী পরিবর্তন হয়েছে, তারও কোনও ব্যাখ্যা নেই নির্দেশনামায়। জামিনের ক্ষেত্রে আইনি ভাবনার প্রতিফলন নেই। আইন খতিয়ে না দেখেই জামিন দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মে-অগাস্ট পর্যন্ত তদন্তের অগ্রগতি সম্বলিত কেস ডায়েরি পেশ করা হলেও, নির্দেশনামায় তার উল্লেখ নেই। আগে কেন মদনের জামিন খারিজ করা হয়েছিল, তারও কোনও উল্লেখ করা হয়নি । এটা যে আর্থিক অপরাধ এবং সমাজের বৃহত্তর অংশকে প্রভাবিত করেছে, তা নির্দেশনামায় বিচারক উল্লেখ করেননি। তদন্তে কী অগ্রগতি হয়েছে এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের জামিন কেন খারিজ করা হয়েছে, তার কোনও উল্লেখ নেই নির্দেশনামায়। সিবিআইয়ের প্রশ্ন, মদন মিত্র জামিনের আবেদন করেছিলেন। তাহলে বিচারক কেন নিজে উদোগী হয়ে অন্তর্বর্তী জামিন দিলেন?
যদিও নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সিবিআইয়ের হাইকোর্টে যাওয়ার প্রসঙ্গে মদনের দাবি, সিবিআই সিবিআয়ের কাজ করবে। সিবিআই সবচেয়ে বড় সংস্থা। হাইকোর্ট সূত্রে খবর, সিবিআইয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হবে। এদিন মন্দিরে পুজো দিতে যান মদন মিত্র। সেখানেই তিনি বলেন, আমি প্রভাবশালী নই, অভাবশালী।


যদিও মদন মিত্র আগে যখন জামিনের আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন, তখন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিচারপতি অসীম কুমার রায় মামলা শুনতে চাননি। এক্ষেত্রেও তার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে আইনজীবী মহলের একাংশ। সেক্ষেত্রে মামলা যেতে পারে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি গিরিশচন্দ্র গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চে। তিনি নিজেও মামলা শুনতে পারেন, কিম্বা অন্য কোনও ডিভিশন বেঞ্চ মামলা পাঠাতে পারেন। এর আগে সারদার অন্য একটি মামলা শুনতে চাননি বিচারপতি গিরিশচন্দ্র গুপ্ত।
এদিকে, হাইকোর্টে জামিন খারিজের মামলার কপি দেওয়া নিয়ে মদন মিত্রর হোটেলে হয় একপ্রস্থ নাটক। বাধার মুখে ফিরতে হয় গোয়েন্দাদের। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তদন্তকারী অফিসার-সহ ৩ জন গোয়েন্দা হোটেলে যান। কথা বলেন রিশেপশনে। এরপর মদন মিত্রর রুম থেকে দু’জন বেরিয়ে আসেন। যাঁদের মধ্যে একজন নিজেকে চিকিৎসক বলে পরিচয় দেন। তাঁরা সিবিআই আধিকারিকদের বলেন, মদন মিত্র অসুস্থ, দেখা করা যাবে না....প্রত্যুত্তরে সিবিআই আধিকারিকরা জানান, জিজ্ঞাসাবাদ করতে নয়, মামলার কপি পৌঁছে দিতেই হোটেলে এসেছেন তাঁরা।
এরপর ওই দু’জন ফের ওপরে চলে যান। মদন মিত্রর সঙ্গে কথা বলে এসে তাঁরা আবারও জানান, মদন মিত্র অসুস্থ, দেখা করা যাবে না। এরপর ঝণ্টু নামে মদনের এক অনুগামী ওপর থেকে নেমে এসে, বলেন, রিশেপশনের ফোন থেকে মদন মিত্রর সঙ্গে সিবিআই আধিকারিকদের কথা বলাতে। সেইমতো ‍কথাও বলেন গোয়েন্দারা। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। কপি না দিয়েই প্রায় আধঘণ্টা পর হোটেল ছাড়ে সিবিআই। যাওয়ার আগে চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তিকে সিবিআই আধিকারিকরা বলে যান, আবার তাঁর সঙ্গে দেখা হবে।
সিবিআই সূত্রে দাবি, গোটা বিষয়টি হাইকোর্টে শুনানির সময় তারা তুলে ধরবে। যদিও মদন মিত্রর আইনজীবীদের দাবি, এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে কপি দিতে গেলে, আদালতের অনুমতি প্রয়োজন।