কলকাতা: ভারতবর্ষের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। দিল্লির ক্ষমতা চাই না, চাই বিজেপিকে হটাতে। খেলা সহজ হবে না। দলের কোর কমিটির বৈঠকের মঞ্চ থেকে পদ্ম শিবিরকে হুঁশিয়ারি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনেই বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে দলের কর্মীদের সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার বার্তা নেত্রীর।

সদ্য উত্সবের মরসুম শেষ হয়েছে বাংলায়। সামনে রয়েছে ছট এবং জগদ্ধাত্রী পুজো। পুজো উপলক্ষে প্রত্যেক রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ নিজের বক্তব্য শুরু করেন দলনেত্রী। বৈঠক থেকে সংগঠনকে আরও মজবুত করে সামনে এগিয়ে চলার ডাক দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তৃণমূল এসেছে লড়াই করে, আরামকেদারায় বসে নয়। একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে লড়াই, শৃঙ্খলাবদ্ধতা দিয়ে আজ তৃণমূল সারা দেশের মধ্যে একটি জায়গায় পৌঁছেছে। এই দল কারও দয়ায় তৈরি হয়নি। তাই দলে থাকতে হলে, দলকে ভালবাসতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে, মানুষের জন্যে কাজ করে, সংগ্রাম করেই থাকতে হবে মমতার বার্তা দলের কর্মীদের।

দলকে মজবুত করে কেন্দ্রকে কড়া জবাব দেওয়ার ডাক দিয়েছেন নেত্রী। হয়তো এর জেরে বহু লোককে প্রাণ হারাতে হবে, হয়েছে তবু অন্যায়ের সামনে মাথা নোয়াতে বারণ করেছেন কর্মীদের। সারা দেশে আজ একনায়কতন্ত্র চলছে। কেউ মুখ খুললেই, প্রতিবাদ করলেই তাঁকে খুন করা হচ্ছে, না হলে আয়কর-সিবিআইয়ের ভয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এভাবে কখনও ক্ষমতায় থাকা যায় না। সহযোগিতার মাধ্যমে, মানিয়ে নিয়ে, অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই ক্ষমতায় থাকতে হয়। অন্যের কন্ঠরোধ করে ক্ষমতায় টেকা যায় না। এপ্রসঙ্গে কেন্দ্র কীভাবে দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে, সেটাও নিশানা করেছেন মমতা।সভা থেকে বিরোধী দলগুলিকেও একহাত নিয়েছেন নেত্রী। কীভাবে বিরোধী দলগুলির কাজ করা উচিত, সেকথারও উল্লেখ করেন। কালো টাকা দিয়ে লোককে কেনা হচ্ছে, চারিদিকে নোঙরা খেলা চলছে, মন্তব্য মমতার।

আগামী ৮ নভেম্বর নোট বাতিলরে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সারা রাজ্য জুড়ে কালাদিবস পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই দিন দলের সমস্ত নেতা-কর্মী-মন্ত্রীদের কালা দিবস পালন করতে হবে। শুধু রাজ্য নয়, সারাদেশ জুড়ে আগামী ৮ নভেম্বর তৃণমূল কর্মীদের কালা দিবস পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

নেত্রীর নিশানায় কেন্দ্রের আধার কার্ড নীতি। আধারের সঙ্গে সমস্ত জরুরি পরিষেবা জুড়ে দেওয়ার ফলে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন বলে আর কিছু থাকছে না। সবকিছু চলে আসছে কেন্দ্রের নজরদারিতে। এই নীতির ঘোরতর প্রতিবাদ করেছেন নেত্রী।

ডেঙ্গি নিয়েও কেন্দ্রকে তোপ। নেত্রীর দাবি, সারাদেশ জুড়ে  না না শরীর খারাপ এই সময় হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গি নিয়ে বারংবার বাংলাকেই কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। অথচ সোয়াইন ফ্লু-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয় দেশের অন্যান্য রাজ্যে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। মমতার দাবি, বাংলায় এখন চিকিত্সা পরিষেবার অনেক উন্নতি হয়েছে। ডেঙ্গিতে মৃত্যুর হার কমেছে। অন্যান্য অসুখ বা সমস্যার কারণেও মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গিতে মৃত্যু বলে জোর করে চালানো হচ্ছে, অভিযোগ দলনেত্রীর। তবে সতর্কতা হিসেবে পুরসভাগুলিকে আরও উদ্যোমী হতে বলেছেন মমতা। এদিকে পরিসংখ্যান দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যে উন্নয়ন হয়েছে, নতুন প্রকল্পের আওতায় এনে যেভাবে রাজ্যের মানুষরা উপকৃত হয়েছেন, সে তথ্যও দিয়েছেন নেত্রী। তৃণমূল নেত্রীর দাবি, বাংলায় নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। অন্যান্য রাজ্যেও বহু লোক চাকরি হারাচ্ছে কিন্তু, টিভির ভাষণে সেগুলো চেপে যাওয়া হচ্ছে, ঘুরিয়ে গুজরাত এবং মোদী সরকারকে কটাক্ষ।

আজকের বৈঠক থেকে পঞ্চায়েতে কীভাবে কাজ করবে দলকর্মীরা, সেই রোডম্যাপ বলে দিয়েছেন নেত্রী। এখন থেকে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।