কলকাতা: অসমে চলতি নাগরিকপঞ্জী তালিকা নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র সমালোচনা করলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। তাঁর দাবি, এই মন্তব্য করে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টকেই অপমান করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।


বিজয়বর্গীয়র অভিযোগ, অশুভ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই এই ধরনের মন্তব্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানেই থেমে থাকেননি বিজয়বর্গীয়। তাঁর আরও অভিযোগ, রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।


এদিন এক বিবৃতি দিয়ে বিজয়বর্গীয় বলেন, সব সম্প্রদায়, রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই অসমে নাগরিকপঞ্জী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাই (মমতার) এহেন মন্তব্য শুধুমাত্র সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে অপমানজনক, তাই নয়। এধরনের মন্তব্য দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধারনার-পরিপন্থী।


বুধবার, অসম প্রশাসনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, অসম থেকে বাঙালিদের তাড়িয়ে দিতে নাগরিকপঞ্জীর প্রথম খসড়া থেকে তাঁদের বাদ দিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে বিজেপি।


বীরভূমের সভা থেকে মমতা বলেন, অসমে বাঙালি খেদাও চলছে। সব রাজ্যেই অন্য রাজ্যের লোক থাকে। এটা তাদের অধিকার। ৩০-৪০ বছর যারা আছে, তাদের তাড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।


পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এক কোটিরও বেশি মানুষকে মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হবে বলা হচ্ছে। আমি বিজেপি সরকারকে বলছি, আগুন নিয়ে খেলবেন না। শান্তিরক্ষা করুন, ভেদাভেদ করবেন না। মানুষের গায়ে হাত পড়লে আমরা ছেড়ে কথা বলব না।


মমতার এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে অসমের কৃষক, শ্রমিক, কল্যাণ পরিষদ। তার প্রেক্ষিতেই মামলা রুজু করে অসম পুলিশ। গুয়াহাটি পুলিশ ডেপুটি কমিশনার রঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের বিরুদ্ধে লতাসিল পুলিশ থানায় একটা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমরা আইনানুগ তদন্ত করব।


পাল্টা সোচ্চার হয় তৃণমূল। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, বিজেপি ও অসম সরকার যদি মনে করে তারা এফআইআর দায়ের করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলকে বাঙালিদের হয়ে সওয়াল করা থেকে আটকাতে পারবে, তাহলে তারা মুর্খের স্বর্গে বসবাস করছে।


তিনি বলেন, এধরনের পুলিশি মামলা ও এফআইআর দিয়ে বাঙালিদের জন্য মমতার লড়াই থামানো সম্ভব নয়। অসম থেকে বাঙালিদের তাড়ানোর এই কৌশল আমরা জানি। বাঙালিরা যদি সমস্যায় পড়েন, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল চুপ বসে থাকবে না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাঙালিদের নাম বাদ দিলে তো বলতেই হবে। মামলা করে ভয় দেখানো যাবে না।


প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে ১৯৫১ সালের নাগরিকপঞ্জীর আধুনিক সংস্করণ প্রক্রিয়া চলছে অসমে। লক্ষ্য, রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোখা ও আসল নাগরিকদের চিহ্নিত করা।


মোদী সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মমতার সরব হওয়াকে উল্লেখ করে, এদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিজয়বর্গীয় আহ্বান করে জানান, তিনি যেন অন্য রাজ্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করেন।


বিজেপি নেতা বলেন, নিজেদের নাগরিকদের রক্ষা করতে সক্ষম অসম প্রশাসন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত নিজের রাজ্যের ওপর নজর দেওয়া এবং প্রত্যক ইস্যু নিয়ে রাজনীতির খেলা বন্ধ করা।