কলকাতা:  নোট বাতিলের বর্ষপূর্তিতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ফের সুর চড়ালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নোট বাতিল আসলে 'নোট বিপর্যয়', মন্তব্য মমতার। নোট বাতিল একটি বড় দুর্নীতি, তদন্ত করলে সামনে আসবে এই সিদ্ধান্তের জেরে কারা লাভবান হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। কালো টাকা রোধের জন্যে মোটেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। আসলে ক্ষমতায় থাকা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কর্মীদের লাভের কথা মাথায় রেখে কয়েকজনের কালো টাকা সাদা করতেই এই উদ্যোগ, ফেসবুকে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। একদলের জন্যে সাদা টাকার ফান্ড তৈরি হয়েছে, কিন্তু দেশ ডুবে গিয়েছে অন্ধকারে। বিদেশের তহবিলে থেকে এখনও এক পয়সাও কালো টাকা উদ্ধার্ করতে পারেনি কেন্দ্র, তোপ মমতার। বাস্তবে এই সিদ্ধান্তের জেরে দেশবাসীর প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য।



মমতার দাবি, নোট বাতিলের ফলে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপেও লাগাম টানতে পারেনি সরকার, বিদেশ থেকেও ফেরেনি কালো টাকা, ধাক্কা খেয়েছে দেশের উন্নয়ন। তার বদলে প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকার জিডিপির ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক লোক চাকরি খুইয়েছেন। তারপরই তিনি দাবি করেন, প্রথম দিন থেকেই তিনি নোট বাতিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার। সেইজন্যেই তিনি কেন্দ্রকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্যে আবেদন জানিয়েছিলেন। ভারতীয় অর্থনীতিকে শেষ করে দিয়েছে এই সিদ্ধান্ত। তারপরই তথ্য দিয়ে ক্ষতির পরিমাণ বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছিল ৬.১ শতাংশে। অথচ ২০১৬ সালে ওই একইসময় দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৯.১ শতাংশ। ২০১৭-র এপ্রিল থেকে জুনে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৭ শতাংশ, কিন্তু তার আগের বছরই বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৯ শতাংশ।

প্রায় ৭৫ হাজার শিল্পপতি অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছেন, ফেসবুকে মন্তব্য মমতার। ভারতের প্রায় লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা ধাক্কা খেয়েছে। এটি একটি কালা সিদ্ধান্ত, একমাত্র প্রাপ্য সমালোচনা, ধিক্কার।

নোট বাতিলের বর্ষপূর্তিতে নিজের টুইটার প্রোফাইল থেকে ছবি সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, আমি আমার টুইটারের ডিপি কালো করে দিয়েছি। নোট বাতিল একটি বিপর্যয়। প্রতিবাদে সবাই সোচ্চার হোন। ৮ নভেম্বরকে কালা দিবস হিসেবে পালনের আর্জি মমতার।





সেইজন্যেই নোট বাতিলের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে আজ কালা দিবস পালন করছে তৃণমূল। দুপুর দুটোয় কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল বেরিয়েছে।

শ্যামবাজারে মিছিলের নেতৃত্বে রয়েছেন মন্ত্রী শশী পাঁজা। গিরিশ পার্কে স্মিতা বক্সি। মৌলালিতে মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্মতলায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, গড়িয়াহাটে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বেহালায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, টালিগঞ্জে অরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল হচ্ছে। পাশাপাশি, কলকাতায় আরবিআইয়ের অফিসের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ বাম-কংগ্রেসের।

দুপুর ২টোয় কংগ্রেসের বিক্ষোভ অবস্থান। নেতৃত্বে রয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধরী। বিকেল সাড়ে চারটেয় রামলীলা পার্ক থেকে মৌলালি, এস এন ব্যানার্জি রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট হয়ে মিছিল করে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে বামেদের।

তবে, কোনওকারণে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে যাওয়ার আগেই পুলিশ মিছিল আটকালে, সেখানে অবস্থান বিক্ষোভ দেখানো হবে বলে সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে।  বিরোধীদের পাল্টা আজকের দিনটিকে কালো টাকা বিরোধী দিবসের ডাক দিয়ে রাজপথে নামছে বিজেপিও। বেলা ১২টায় কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের সামনে সই সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয় বিজেপির তরফে। দুপুর ১টায় চাঁদনি চক থেকে শুরু হয় বিজেপির মিছিল। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরের সামনে গিয়ে মিছিল শেষ হয়।

বিকেল ৫টায় নিউটাউনে সভা করার কথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের।