নারদ ঠেকাতে দিদির ভাবনায় এ বার সুপ্রিম কোর্ট

ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ Updated at: 06 Apr 2016 03:22 AM (IST)

শঙ্খদীপ দাস




দিদি বলেছিলেন, চৈত্র-বৈশাখটা যাক। তদ্দিন বাজে কথা বন্ধ রাখ! নারদটাকে চুপ করা।

নারদ কিন্তু চুপ করেননি! বরং ববি-শোভনদের নিয়ে একের পর এক অসম্পাদিত ফুটেজ ছড়িয়ে দিচ্ছেন অন্তর্জালে। আবার ‘বাজে বকা’ও বন্ধ হয়নি দলে! সব্যসাচী দত্তের মতো বিধায়ক বলেছেন, তৃণমূলে মড়া ভাসে! উপরি ঝুলছে এ ব্যাপারে হাইকোর্টের মামলা। নারদের মুখ চেপে ধরতে তাই এ বার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিল তৃণমূল।

শুক্রবার হাইকোর্টে নারদ-মামলার শুনানি রয়েছে। সূত্রের মতে, হাইকোর্ট সে দিন এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিলেই তাতে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে তৃণমূল।
এ জন্য দিল্লির দুঁদে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শও শুরু করে দিয়েছেন দলের নেতারা।

নারদ নিয়ে তদন্তের দাবিতে আগেই হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দলের তরফে সেই মামলা লড়ছেন তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালতের কাছে যিনি আবেদন করেছিলেন, ভোটের মধ্যে যেন আর নারদ নিয়ে শুনানি না হয়।

কিন্তু শুনানি বন্ধ করতে রাজি হয়নি আদালত। ৮ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। তার মধ্যে আবার আজ আদালতে হলফনামা পেশ করে নারদ নিউজের কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আদালতে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে নিরাপদ বোধ করছেন না। তা ছাড়া ভিডিও টেপটা এত দূর বয়ে আনতে গিয়ে সেটারও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আদালত নির্দেশ দিলে তিনি তখনই দিল্লিতে অবস্থিত কোনও তদন্ত সংস্থার হাতে ওই টেপ তুলে দিতে পারেন।

শুক্রবার আদালত কী নির্দেশ দেবে, তা নিয়ে জল্পনা রয়েইছে। কিন্তু দিল্লিস্থিত তদন্ত সংস্থা মানে তো সিবিআই! ভোট বাজারে নারদ ফুটেজ যদি সিবিআইয়ের হাতে চলে যায়, তার রাজনৈতিক বার্তা কী হতে পারে, আন্দাজ আছে?

তৃণমূল সূত্রের মতে, তাই আগেভাগেই সুপ্রিম কোর্টে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন দিদি। ক’দিন আগের কথা। দিদির নির্দেশে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি যান তৃণমূল নেতা মুকুল রায়। পোশাকি সেই কলা বেচার আড়ালে রথও দেখেন মুকুলবাবু! প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল তথা বিশিষ্ট আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গেও তিনি দেখা করেন। তাঁকে রীতিমতো পারিশ্রমিক দিয়ে জানিয়ে আসেন, নারদ টেপ নিয়ে শুক্রবার হাইকোর্ট কোনও তদন্তের নির্দেশ
দিলে সর্বোচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ চেয়ে সে দিনই যেন আবেদন জানান গোপাল সুব্রহ্মণ্যম।

মুকুলবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য পুরোটাই উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘একদম বাজে কথা। গত এক বছরে গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি।’’

তৃণমূল সূত্রের মতে, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে হাইকোর্টে আইনি লড়াইয়ের ক্ষেত্রে দলের ব্যর্থতা। হাইকোর্টে কল্যাণবাবুর ‘ঘুষ না অনুদান’ সংক্রান্ত মন্তব্য নিয়ে সে দিন থেকেই জলঘোলা শুরু হয়েছিল। তৃণমূলেরও অনেকে বলেছেন, ওই মন্তব্য করে কল্যাণবাবু আসলে মেনে নিয়েছেন নারদ-কাণ্ডে সত্যিই টাকা নেওয়া হয়েছে! এবং নারদ টেপ মিথ্যা নয়! নারদ টেপ জাল এবং পুরোটাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব প্রথম দিন থেকে যে তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন, কল্যাণবাবুর ওই এক কথাতেই তা ভেস্তে যায়! প্রশ্ন হল, যদি ওই টাকা অনুদানই হয়, তা হলে তার রসিদ কোথায়? আর এই গোটাটায় প্যাঁচে পড়ে গিয়েছে তৃণমূল। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রাজকীয় ব্যর্থতার’ কারণেই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে!’’ আবার কল্যাণ এই প্রতিবেদককে বলছেন, ‘‘যাঁরা আপনাকে এ সব বলেছেন, তাঁরা কেউ আমাকে ফোন করে কিছু বলেননি। রাম-শ্যাম-যদু-মধু কে কোথায় কী বলল, তাতে কী
যায়-আসে!’’

নারদ-কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল এ দিন জানান, কলকাতা হাইকোর্টে যে জনস্বার্থ মামলা চলছে, তাতে তিনি আদালতের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করবেন। সেই সঙ্গে তিনি নিজেই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ভাবছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন রাজ্যসভায় আমার বিরুদ্ধে বেআইনি টাকা লেনদেনের অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে ডেরেক সংসদে এ-ও জানিয়েছেন, ফুটেজটি প্রকাশের দিন দুবাইয়ে আমি সাত বার ফোন করেছিলাম! আমার ফোন ট্যাপ না করলে এই তথ্য জানা সম্ভব নয়।’’ ম্যাথুর দাবি, ‘‘সেই কারণেই রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারির কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছি। এর পর সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারি।’’

তহলকা কাণ্ডেও ম্যাথু স্যামুয়েলের বড় ভূমিকা ছিল। সেই মামলা এখনও চলছে সিবিআই আদালতে। মাঝে কেটে গেছে দেড় দশক। নারদ নিয়ে মামলার ব্যাপারটা তাই ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে। দলের এক নেতা আজ বলেন, ‘‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা! নারদে ছুঁলে কী জানি কত? তবে আপাতত মা মা করে চৈত্র-বৈশাখটা পার হয়ে গেলেই ভাল!’’


 

- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -

© Copyright@2024.ABP Network Private Limited. All rights reserved.