কলকাতা:  কেন্দ্রীয় সরকার স্টেন্টের দাম এক ধাক্কায় অনেকটা কমিয়েছে। কিন্তু, এর সুফল কি সাধারণ মানুষ পাবে? না কি,বেসরকারি হাসপাতালগুলির একাংশ, কৃত্রিম অভাব তৈরি করে কিংবা চিকিৎসার পদ্ধতিগত খরচের মাত্রা বাড়িয়ে ঘুরপথে লাভের চেষ্টা করবে?

চিকিৎ‍সা বিজ্ঞানে স্টেন্ট এক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,

হার্টে ব্লক দেখা দিলে হৃদপিণ্ডের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হয় না। স্টেন্ট এমন এক যন্ত্র যার সাহায্যে এই ব্লক দূর করে রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক করা যায়।

এই স্টেন্টেরই দাম প্রায় ৮৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অভিযোগ, এতেই বুকে

ব্যথা শুরু হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলির একাংশের। কেন? বিশেষজ্ঞরা একাংশের দাবি,

এত দিন স্টেন্ট বিক্রির ক্ষেত্রে দামের কোনও ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া ছিল না। এতে কোনও কোনও হাসপাতাল কার্যত যা খুশি দাম নিত। কখনও কখনও সেই লাভের পরিমাণ ৬৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছত বলেও অভিযোগ। নতুন নিয়মে কোনও ভাবেই স্টেন্টের জন্য ৩০ হাজার টাকার বেশি দাম নেওয়া যাবে না।

অনেকের অবশ্য আশঙ্কা, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর একাংশ নিজেদের লাভ অটুট রাখতে চিকিৎসার পদ্ধতিগত খরচের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। সল্টলেকের এক হাসপাতাল-কর্তার বক্তব্য,

আগে স্টেন্টের দাম ৯৫ হাজার টাকা হলে প্রসিডিওর চার্জ নেওয়া হতো হয়তো ২৫ হাজার টাকা। মোট প্যাকেজ দাঁড়াত ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এখন স্টেন্টের দাম ৩০ হাজারের বেশি নেওয়া যাচ্ছে না। তাই প্রসিডিওর চার্জ বাড়িয়ে ৮০ হাজার করা হয়েছে। তা হলে মোট প্যাকেজ দাঁড়াল ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা।

পদ্ধতিগত খরচগুলি কী কী?

বেড ভাড়া, ওটি চার্জ, কার্ডিওলজিস্টের ফি, অ্যানেস্থেশিওলজিস্টের ফি, ওষুধ-ইঞ্জেকশন ইত্যাদি।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে দাবি, অস্ত্রোপচারের আগে দামি পরীক্ষানিরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া, রোগীর হাসপাতালে থাকার মেয়াদ বাড়িয়েও খরচ বাড়ানোর কথা ভাবছে কোনও কোনও হাসপাতাল।

একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার এও বলেছেন, সারা দিনে ব্লাডসুগার মাপার সংখ্যা বাড়িয়ে, পালস অক্সিমিটারের খরচ বাড়িয়ে, গ্লাভসের ব্যবহার বাড়িয়ে কত বিল বাড়ানো যায়, সে সম্পর্কে মানুষের ধারণা কতটুকু?

আগে একই বেলুনে অন্তত ১০ জন রোগীর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হতো। এখনও তা-ই হবে।

‘‘কিন্তু প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা বেলুনের দাম নেওয়া হবে। একেকটি বেলুনের দামই ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।’’

‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি’র কর্তারা জানিয়েছেন,

এই পদ্ধতিগত খরচ বা প্রসিডিওর চার্জের উপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ নেই। সেটা রাজ্য সরকারগুলিকে দেখতে হবে। কিন্তু, রাজ্য সরকারেরও হাত-পা বাঁধা। কারণ, এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার উপযুক্ত আইন এখনও চালু হয়নি। ‘ক্লিনিকাল এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট’ হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছরেও তার বিধি তৈরি করে উঠতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর আশ্বাস, বিধি তৈরির কাজ চলছে। এপ্রিলের মধ্যে নতুন আইনের প্রয়োগ শুরু হয়ে যাবে।