কলকাতা: রাজীব ভট্টাচার্যের দেহ উদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা জারি। পাঁচ শেরপার উদ্ধারকারী দল আজই বেস ক্যাম্প থেকে ওপরের দিকে রওনা দিয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে দু-তিনদিনের মধ্যে দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তারা।

শৃঙ্গজয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে ছুটে গিয়েছিলেন দুর্গম পথে। এখন সেই পর্বতের কোলেই কোথাও পড়ে রয়েছে বাঙালি পর্বতারোহী রাজীব ভট্টাচার্যর প্রাণহীন দেহ। রবিবার পর্যন্ত সেই দেহ উদ্ধার করা যায়নি। আপ্রাণ চেষ্টা জারি রয়েছে। পাঁচ শেরপার দল বেস ক্যাম্প থেকে রওনা দিয়েছে।

শনিবারই রাজীবের দেহ উদ্ধারের জন্য পাঁচজন অভিজ্ঞ শেরপাকে বেস ক্যাম্পে পাঠানো হয়। রাজীবের দেহ রয়েছে বেস ক্যাম্প থেকে আরও অনেকটা উঁচুতে, ক্যাম্প থ্রি-র কাছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেরপাদের দলটি শনিবার বেস ক্যাম্প থেকে রওনাই দিতে পারেনি। রবিবার সকাল থেকে আবহাওয়ার অনেকটাই উন্নতি হয়। তাই আর দেরি না করে শেরপাদের দলটি ক্যাম্প ওয়ানের দিকে রওনা দেয়।

অন্যদিকে, রাজ্য যুবকল্যাণ দফতরের পর্বতারোহী বিভাগের তরফেও তিন সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দলকে শনিবার কাঠমান্ডুতে পাঠানো হয়েছে। এই দলে রয়েছেন এভারেস্টজয়ী দীপঙ্কর ঘোষ, দেবদাস নন্দী এবং রাজীবের এক আত্মীয়। এর মধ্যে দেবদাস নন্দী রবিবার হেলিকপ্টারে চড়ে বেস ক্যাম্পে পৌঁছেছেন। উদ্ধারকারী দলের তরফে জানানো হয়েছে, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে, দু-তিনদিনের মধ্যে ক্যাম্প থ্রি-র কাছে পৌঁছনো সম্ভব হবে, যেখানে রয়েছে রাজীবের দেহ।

১১ এপ্রিল কাঠমাণ্ডু থেকে ধৌলাগিরির উদ্দেশে অভিযান শুরু করেন রাজীব৷ প্রথমে ধৌলাগিরি বেসক্যাম্পে পৌঁছন তিনি৷ সেখান থেকে প্রথমে ক্যাম্প ওয়ান৷ তারপর ক্যাম্প টু৷ ১৯ মে ক্যাম্প থ্রি হয়েই ধৌলাগিরি শৃঙ্গজয় করেন রাজীব৷ কিন্তু, ফেরার সময়ই স্নো-ব্লাইন্ডনেসের শিকার হন৷ চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না৷

রাজীব অবশ্য থামেননি। প্রবল অসুস্থতা নিয়েই এগোতে থাকেন। কিন্তু, ক্রমশ কমতে থাকে অক্সিজেন৷ ক্লান্তি গ্রাস করতে থাকে রাজীবকে৷ প্রকৃতির সঙ্গে যুঝেও শেষরক্ষা হয়নি৷ যে পর্বত জয়ের হাতছানিতে ছুটে গিয়েছিলেন, সেখানেই লুটিয়ে পড়েন রাজীব।

কিন্তু কেন বারবার পর্বতারোহণে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে বাঙালি মধ্যবিত্ত ঘরের পর্বতারোহীদের? প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি অর্থাভাব বা শৃঙ্গজয়ের মোহও কি এর নেপথ্যে অন্যতম কারণ? অভিজ্ঞ পর্বতারোহীদের অনেকে অন্তত তেমনটাই মনে করছেন। অনেকে আবার মত, অভিজ্ঞ শেরপার অভাবই ভোগাচ্ছে পর্বতারোহীদের। রাজীব ভট্টাচার্যের মৃত্যু ফের একবার উস্কে দিল সেই প্রশ্নটাই। এভারেস্টে তুষারঝড় এবং নেপালে ভূমিকম্পে ৩০ জন অভিজ্ঞ শেরপার মৃত্যু হয়েছে। এরপর থেকেই অভিযানের জন্য অভিজ্ঞ শেরপার সংখ্যা হাতে গোনা দাঁড়িয়েছে।