কলকাতা: # এমপি বিড়লাকাণ্ডে গ্রেফতার অভিযুক্ত স্কুলকর্মী। সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয় তাকে।  সাড়ে তিন বছরের শিশুকে যৌন অত্যাচার করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল সাসপেন্ড হওয়া স্কুলকর্মী মনোজকে। এদিনই মনোজকে সাসপেন্ড করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সূত্রের দাবি, শিশুর শরীরে আঘাতের জন্য দায়ী মনোজ। মনোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত। তার বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু। জানা গিয়েছে, পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল মনোজ। 


এম পি বিড়লা স্কুলেও অভিভাবকদের বিক্ষোভ। আর সোমবার সন্ধেয় সেই বিক্ষোভ ঘিরেই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল! অভিভাবকদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ।
সন্ধেয় একটি স্কুল বাস বেরোনোকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। অভিভাবকদের অভিযোগ, বাসে করে শিক্ষকদের বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল....প্রতিবাদ জানাতেই পুলিশ বলপ্রয়োগ করে।

যদিও, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকারের দাবি, এম পি বিড়লা স্কুলের সামনে বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে। নূন্যতম বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। বাচ্চাদের যেতে দেওয়া হচ্ছিল না। তাই প্রথমে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু, না শোনায় শিশুদের নিরাপদে বেরোনোর ব্যবস্থা করতেই নূন্যতম বলপ্রয়োগ করা হয়েছে।
এমপি বিড়লা স্কুলে সাড়ে তিন বছরের শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ স্কুলেরই কর্মীর বিরুদ্ধে! জিডি বিড়লার মতো সুবিচার চাইছেন এমপি বিড়লার অভিভাবকরাও।
সোমবার সকাল সাড়ে নটা নাগাদ স্কুলে আসেন শিশুর মা-বাবা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমপি বিড়লা স্কুলের গেটে বাড়তে থাকে অভিভাবকের সংখ্যা। এর মধ্যেই মর্নিং সেকশনের ছুটি হয়ে যায়। যাঁরা সন্তানকে নিতে এসেছিলেন, তাঁরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত হচ্ছে, তখন স্কুলে পৌঁছয় পুলিশের অতিরিক্ত বাহিনী। এর মধ্যেই এক বিক্ষোভরত অভিভাবক একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে ফেলেন। যার জেরে অন্যদের হাতে নিগৃহীত হতে হয় তাঁকে। সকাল সাড়ে এগারোটা স্কুল লাগোয়া জেমস রং সরণীতে অবরোধ শুরু করেন অভিভাবকরা।
কিছুক্ষণের মধ্যে অবরোধ উঠলেও, মিনিট কয়েকের মধ্যে ফের শুরু হয় অবরোধ। এমপি বিড়লা স্কুলে ঢুকতে বিক্ষোভের মুখে পড়েন স্থানীয় কাউন্সিলর মানিক চট্টোপাধ্যায়। বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের সদস্য সৌমিত্র রায়কেও। তাঁকে জুতো দেখানো হয়।

এমপি বিড়লা স্কুলের ঘটনাতেও তৎপর ছিল বিজেপি। প্রেক্ষিত, ফুলের মতো শিশুর উপর অত্যাচারের অভিযোগ, আর স্লোগানে রাজনৈতিক ধ্বনি। এমপি বিড়লা স্কুলে পোস্টার লাগায় এসইউসির ছাত্র সংগঠন ডিএসও। কিন্তু তাদের সেই পোস্টার খুলে দেন অভিভাবকরা।
এরমধ্যেই আসরে নামে এমপি বিড়লা স্কুল কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ হাতে মাইক নিয়ে বলেন, পুলিশ যদি কাউকে দোষী বলে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এরপর নির্য়াতিত শিশুর মা ও কয়েকজন অভিভাবক স্কুলে ঢোকেন। পুলিশের মধ্যস্থতায় একটি বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সন্দেহভাজন স্কুলের কর্মচারী মনোজকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ জানান, মনোজ নামে এক কর্মীকে একজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

যদিও, এই সাসপেনশনে সন্তুষ্ট নয় নিগৃহীতা শিশুর মা। বলেন, আমরা এতে সন্তুষ্ট নই, গ্রেফতার করতে হবে। তাঁকে সমর্থন করে অন্য অভিভাবকরাও অভিযুক্তের গ্রেফতারির দাবি তোলেন। তাঁরা বলেন, আমরাও চাই গ্রেফতার করতে হবে, সাসপেন্ড করে কিছু হবে না।
পুলিশকে ঘিরে একপ্রস্থ বিক্ষোভও দেখান অভিভাবকরা। পুলিশ জানিয়েছে, ওই শিশুর স্কুলের পোশাকে রক্তের দাগ ছিল। পোশাকটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে।
এমপি বিড়লা স্কুলের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, আমরা যতদূর জানি, তদন্তে এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্তে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি পুলিশ। যদিও, পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পর একজন সার্ভিস স্টাফকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তদন্ত এখনও বাকি আছে।
নিগৃহীত শিশুর মা দাবি করেন, তাঁকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হয়নি। বলেন, আমাকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হয়নি। আমরা বাচ্চাকে অন্য কোনও স্কুলে ট্রান্সফার করিনি। অসুস্থ হয়ে এখন বাড়িতে রয়েছে বাচ্চা।
এর মধ্যেই, জিডি বিড়লার মতো এমপি বিড়লা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠল। সাসপেন্ড হওয়া মনোজের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একাধিক পড়ুয়া। অভিভাবকদের একাংশের দাবি, তাঁদের শিশু সন্তানরাও স্কুলে একই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে!
এমপি বিড়লার অভিভাবকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল আটটায় ফের তাঁরা স্কুল থেকে মিছিল করবেন। ঘেরাও করা হবে বেহালা থানা। এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য জিডি বিড়লার অভিভাবকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।