কলকাতা: অবশেষে তৃণমূলের মুকুল ঝরে গেল।
ক’দিন আগেও বলেছিলেন, ক্রিজে থাকলেই রান উঠবে। কিন্তু, অবশেষে তৃণমূল থেকে ইনিংস ডিক্লেয়ারই করে দিলেন মুকুল রায়। বাকি রইল শুধু সাংসদ পদ। এদিন রাজ্যসভার সাংসদ বলেন, পুজোর পর রাজ্যসভার সাংসদপদ ছেড়ে দেব। দলের সাধারণ সদস্যপদ ছেড়ে দেব। কেন তৃণমূল ছাড়তে বাধ্য হলাম, তা পুজোর পর জানাব।
তৃণমূলের পাল্টা প্রশ্ন, ছাড়বেন যখন, দেরি কেন? দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, পুজোর বাহানা দিচ্ছেন কেন? চলে যাচ্ছেন না কেন? গেলে কি পুজো বন্ধ হয়ে যাবে?
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সোমবারের বাগযুদ্ধ যদি ক্লাইম্যাক্স হয়, তাহলে তার শুরুটা হয়েছে দু’বছর আগে। ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি। সারদাকাণ্ডে মুকুল রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই।
কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগে সরব, তখন মুকুল রায়ের গলায় শোনা যায় কার্যত আত্মসমর্পণের সুর। বলেছিলেন, আমি চাই সত্যিটা বেরিয়ে আসুক। তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য সিবিআই যখন ডাকবে আসব।
এরপরই বিজেপির সঙ্গে মুকুলের ঘনিষ্ঠতার জল্পনার পারদ চড়তে শুরু করে। অভিযোগ ওঠে, জেল এড়াতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন মুকুল রায়।
সম্প্রতি নারদকাণ্ডেও সিবিআইয়ের কাছে হাজির হয়ে একইভাবে বাকি অভিযুক্তদের থেকে নিজেকে আলাদা করার কৌশল নেন তিনি। বলেন, আমি একমাত্র যাকে টাকা নিতে দেখা যায়নি।
স্বাভাবিকভাবেই মুকুলের এই অবস্থান ভালভাবে নেয়নি দল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে নথি স্বীকার করেছে নিজের স্বার্থে।
এর মধ্যেই ফের মাথাচাড়া দেয় মুকুলের বিজেপিতে যাওয়ার জল্পনা। যাতে ঘি ঢালে অরুণ জেটলি এবং আরএসএস শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের খবর। পাল্টা কড়া বার্তা দিয়ে একের পর এক সংসদীয় কমিটি থেকে তাঁকে ছেঁটে ফেলে তৃণমূল।
মুকুলের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয় একের পর এক রাজ্যের দায়িত্ব। সর্বভারতীয় সহ সভাপতির যে পদে তিনি ছিলেন, সেই পদটিই তুলে দেওয়া হয়।
তবে এতসবের পরও রবিবার তৃণমূলের আরেক সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষের দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে যান মুকুল। যাতে পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হয়ে ওঠে।
সূত্রের দাবি, এরপরই মুকুলের শাস্তির বিষয়ে তৎপর হয় তৃণমূল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, নিজের স্বার্থে দলের ক্ষতি করছেন। দলকে দুর্বল করার পরিকল্পনা করেছেন।
দলের মধ্যে তাঁকে নজরবন্দি করা নিয়ে রবিবার তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরাসরি খোঁচা দেন মুকুল। এদিন তারও জবাব দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বলেন, জগদ্দলে হেরে যাওয়ার পরও স্নেহবশত মমতা নানা পদ দিয়েছেন। কী পেলে সন্তুষ্ট হবে? বাচ্চা ছেলেরা হয়, বুড়ো ভামরা কেন হয় না, বুঝতে পারছি না।
রাজনৈতিক মহলে আপাতত একটাই প্রশ্ন। তৃণমূল থেকে ঝরে এবার কোন ডালে ফুটবে মুকুল?