অরণ্যবাসী মানুষের অধিকারের জন্য আর আগুন ঝরাবে না তাঁর কলম। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের মতো আন্দোলনে আর প্রতিবাদে আর সরব হবেন না তিনি।
মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম ঢাকায় ১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি। বাবা কল্লোল যুগের কবি ও সাহিত্যিক মণীশ ঘটক। লিখতেন ‘যুবনাশ্ব’ ছদ্মনামে। মা ধরিত্রী দেবীও ছিলেন লেখক ও সমাজসেবী। মহাশ্বেতা দেবীর ছোট কাকা পরিচালক ঋত্বিক ঘটক।
এহেন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড় হয়ে ওঠার সূত্রেই লেখালেখির জগতে আসা মহাশ্বেতা দেবীর। দেশভাগের পর চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। শান্তিনিকেতন থেকে ইংরেজিতে স্নাতক। স্নাতকোত্তরের পাঠ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গণনাট্য আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিজন ভট্টাচার্যর সঙ্গে পরিণয়। ১৯৫৯ সালে বিচ্ছেদ। এরই মাঝে ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় বিজন-মহাশ্বেতার একমাত্র সন্তান নবারুণের। তিনিও সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। কয়েক বছর আগে মৃত্যু হয় নবারুণ ভট্টাচার্যর।
১৯৬৪ সালে বিজয়গড় কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। চাকরির পাশাপাশি সাহিত্য চর্চা। লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা। সঙ্গে সমাজ সেবা, অরণ্যবাসী মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই। তাঁর সাহিত্যেও রয়েছে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের বঞ্চনা, শোষণের বাস্তব চিত্র।
তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘অগ্নিগর্ভ’ প্রভৃতি। ‘অরণ্যের অধিকার’ উপন্যাসের জন্য ১৯৭৯-এ পান সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান মহাশ্বেতা দেবী। পরে সম্মানিত হন পদ্মশ্রী, পদ্মবিভূষণ, জ্ঞানপীঠ, রামন ম্যাগসেসে, বঙ্গবিভূষণ সহ একাধিক পুরস্কারে। তাঁর লেখার ওপর ভিত্তি করে হয়েছে ‘রুদালি’, ‘হাজার চওরাশি কি মা’, ‘গঙ্গোর’- সহ বেশ কয়েকটি সিনেমাও।
শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগঢ়ের উপজাতি মানুষদের সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বরাবর অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন মহাশ্বেতা দেবী।
সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িয়েছেন সক্রিয়ভাবে। পথে নেমেছেন তত্কালীন শাসক দলের বিরুদ্ধে।
২০১১ সালের পরিবর্তনের আন্দোলনেও অগ্রণী মুখ হয়ে ওঠেন মহাশ্বেতা দেবী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ব্রিগেডে তৃণমূলের সমাবেশ মঞ্চে আগামী দিনের একমাত্র যোগ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
মানুষের পাশে থেকেছেন....প্রতিবাদে পা মিলিয়েছেন....। তাঁর সৃষ্টির মতোই অনুপ্রেরণা হয়ে রইল তাঁর সেই প্রতিবাদ।