কলকাতা: গ্রেটার নয়ডায় কলকাতা পুলিশের বিশেষ টিমের হাতে গ্রেফতার, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত কাদের খান ও আরেক অভিযুক্ত আলি খান। কীভাবে কাদেরের খোঁজ পেলেন তদন্তকারীরা?

চার বছর ধরে নানা ঠিকানায় গা ঢাকা। পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি। কিন্তু, শেষরক্ষা হল না।
একেবারে ফিল্মি কায়দায় পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত, কাদের খান ও আলি খানকে গ্রেটার নয়ডা থেকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ।

২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণকাণ্ডের পরই গা ঢাকা দেয় কাদের ও আলি খান। মুম্বইয়ের একটি হোটেলে খোঁজ মেলে কাদেরের। কিন্তু, পুলিশ যাওয়ার আগেই ভ্যানিশ হয়ে যায় সে। মাঝে একবার, বাংলাদেশ পালানোর খবর ছড়ালেও, পুলিশের দাবি, তা সত্যি নয়। তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতেই ওই খবর ছড়ানো হয়। কিন্তু, হাল ছাড়েনি কলকাতা পুলিশ। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েই রাজীব কুমার ডিসি সাউথ মুরলীধর শর্মাকে নির্দেশ দেন, কাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। ডিসি সাউথ মুরলীধর শর্মার নেতৃত্বে গড়া হয় তদন্তকারী দল। শুরু হয় কাদেরের আত্মীয়দের ফোনে আড়ি পাতা।

পুলিশ সূত্রে দাবি, গোড়ায় সেরকম কোনও সূত্র মেলেনি। কয়েকদিন পর তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, ওই আত্মীয়রা নিজেদের মধ্যে সাঙ্কেতিক ভাষায় কথা বলছেন। যেমন, কেউ কাউকে বলছেন, মেহমানকে পাশ সামান পৌঁছ গ্যায়া। কেউ বলছেন, মেহম্যান ঠিক হ্যায়। এই সব সাঙ্কেতিক কথোপকথনের সূত্র ধরে এগোতে থাকে কলকাতা পুলিশ। তদন্ত আরেকটু এগোতেই দেখা যায়, কাদেরের বাড়ির লোকজন মাঝে মাঝে বিহারে যাচ্ছেন। তাঁদের পিছু নেয় পুলিশ।

পটনা, রাঁচি, সমস্তিপুর হন্যে হয়ে কাদেরকে খুঁজতে থাকেন গোয়েন্দারা। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে গ্রেটার নয়ডায় খোঁজ মেলে ফয়জল নামে কাদেরের এক আত্মীয়ের। দেরি না করে, সেখানে যান তদন্তকারীরা। আলফা টু সেক্টরের এই আবাসনে পেইং-গেস্ট হিসেবে থাকেন ফয়জল। পুলিশ পরিচয় লুকিয়ে পাশের ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন কলকাতা পুলিশের অফিসাররা। আলাপ জমান প্রতিবেশীদের সঙ্গে। তাঁদের থেকেই পুলিশ জানতে পারে, এই ফ্ল্যাটে ফয়জলের সঙ্গে থাকে তাঁর মামু। পুলিশের তখনই সন্দেহ হয়, এই মামুই, কাদের আর আলির মধ্যে কেউ একজন। কয়েকদিনের মধ্যেই কাদের ও আলিকে ফ্ল্যাটে আসতে দেখেন তদন্তকারীরা। চেহারা বদলে গেলেও পার্ক স্ট্রিটকাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে চিনতে ভুল হয়নি দুঁদে গোয়েন্দাদের। এরপর থেকেই তাঁদের ওপর নজরদারি শুরু হয়। বৃহস্পতিবার, এক আত্মীয়ের বাড়িতে পার্টির জন্য কাদেরদের নিয়ে দিল্লি যায় ফয়জল। পিছু ধাওয়া করেন গোয়েন্দারা। রাতেই দিল্লি থেকে নয়ডা রওনা দেয় কাদেররা।

তখনই কলকাতা পুলিশ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, নয়ডা ফিরলেই কাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে।
স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে, চাওয়া হয় সাহায্য। রাতের অন্ধকারে ফয়জলের ফ্ল্যাট ঘিরে ফেলে পুলিশ। কাদেররা ফিরতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা। পুলিশ সূত্রে খবর, পাঁচতলার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করে কাদেররা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।