কলকাতা ও নয়াদিল্লি: মুকুল রায়ের মন্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে পাল্টা জবাব দিল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের তরফে জবাব দিতে গিয়ে সদ্য ইস্তফা দেওয়া রাজ্যসভার সাংসদকে ‘কাঁচরাপাড়ায় কাঁচরাবাবু’ বলে কটাক্ষ করলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, মুকুল দলে জমিদারি চালাতেন।
দল ছাড়ার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে যে কারণকে হাতিয়ার করেছেন মুকুল তার তীব্র সমালোচনা করেন পার্থ। এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে পার্থ বলেন, এতদিন পরে বোধোদয় কেন? ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল তৃণমূল। আসলে তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে তথ্য ভুল দিচ্ছেন মুকুল।
এদিন তৃণমূল নতৃত্বেকে আক্রমণ করে মুকুল দাবি করেন, তৃণমূল এমন এক দল যেখানে একজনই নায়ক। একনায়কের দল দেশের জন্য ভাল নয়। একটা সময়ের পর এই ধরণের দল ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। জবাবে মুকুলকে কটাক্ষ করে পার্থ বলেন, মুকুলের কথা গুরুত্বহীন। কাঁচরাপাড়ায় কাঁচরাবাবু। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চেয়েছিলেন বলেও মুকুলকে আক্রমণ করেন পার্থ। বলেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চেয়েছেন মুকুল। বিশ্বাসহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। তিনি যোগ করেন, কাঁচরাপাড়ার কাঁচা ছেলের হাত থেকে বাঁচল দল।
মুকুল এদিন দাবি করেন, ২০০৩ সালে মমতার নির্দেশেই আরএসএস, বিজেপি সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। এই বিষয়টিকেও খারিজ করেছেন পার্থ। জানিয়ে দেন, মুকুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি আরএসএসের সঙ্গে। তাঁর দাবি, সিবিআই যেদিন থেকে মুকুলকে জেরা করতে শুরু করল, তখন থেকেই তলে তলে দলকে না জানিয়েই বিজেপির নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করে দেন মুকুল।
মুকুল এদিন দাবি করেছেন, জেটলি, বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে তাঁর খুব ভাল সম্পর্ক। এই বিষয়টিকেও হাতিয়ার করে আক্রমণ করেছেন পার্থ। বলেছেন, সিবিআই থেকে বাঁচার জন্য, হতাশা থেকেই বাঁচতেই মন্তব্য। উনি টিউবলাইট, সিবিআইয়ের গুঁতো খাওয়ার পরে বুঝেছেন বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল নয়।
মুকুল এদিন বলেছেন, মমতা তৃণমূলের নেত্রী, কিন্তু আমরা চাকর নই। আমি তৃণমূলে থেকে যেতে পারতাম। কিন্তু দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের মত মুখ বন্ধ করে থাকতে পারব না। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমাদের নেত্রী এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একজনকে সামনে রেখে দল চলছে, উনি পরে বুঝেছেন। তিনি যোগ করেন, আমাদের রোল মডেল মমতা। রোল মডেল করতে হলে একজনকে সামনে রাখতে হয়। আমরা দলের কোনও চাকর নেই, সহকর্মী। তৃণমূলের মহাসচিব যোগ করেন, দল সুযোগ দিয়েছিল কাজ করার, কিন্তু উনি তা করেননি।
এখানেই থেমে থাকেননি পার্থ। মুকুল রায়ের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, কে চিনত মুকুল রায়কে, আজ খাতাপত্র নিয়ে বসেছেন। উল্টোপাল্টা কথার কোনও মূল্য নেই। তাঁর দাবি, সবৈব মিথ্যা কথা বলছেন মুকুল। ৬ মাস ধরে নাটক করছেন।
কয়েকদিন আগে মুকুলকে ‘গদ্দার’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিন ইস্তফা দেওয়ার পর সাংবাদিক সম্মেলনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ‘বাচ্চা ছেলে’ বলে কটাক্ষ করেন মুকুল। বলেন, পার্থ বাচ্চা ছেলে, ওর কথার জবাব দেব না, বাংলার মানুষ দেবে। এর জবাবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি বাচ্চা ছেলে, উনি আমার বড়দা। মুকুল রায়কে জবাব দিতে হবে।