কলকাতা: অফিস টাইমে শিয়ালদা স্টেশনে দুর্ঘটনার কবলে আপ সোনারপুর লোকাল। প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট জায়গায় না থেমে গার্ড ওয়ালে ধাক্কা ট্রেনের। বেলাইন কয়েকটি কামরা। ২১ যাত্রী আহত। বুধবার সকালের এই ঝাঁকুনি ফের একবার প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল যাত্রী নিরাপত্তাকে।
ঘড়িতে তখন সকাল ১০.১৭। ভরা অফিস টাইম। শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে আপ সোনারপুর লোকাল। যাত্রীরা সব নামার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছেন। কেউ দরজার হাতল ধরে ঝুলছেন চলন্ত অবস্থাতেই নামবেন বলে। কারণ, নেমেই যে ছুটতে হবে কর্মস্থলের উদ্দেশে! প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরাও ট্রেনে ওঠার তোড়জোড় করছে। সবটাই রোজকার অভ্যেসে।
কিন্তু, অভ্যেস মানল না ট্রেনই। সবাইকে চমকে দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় না থেমে, সোজা গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারল গার্ড ওয়ালে। এক যাত্রী বলেন, প্রচন্ড শব্দ। ধাক্কা মারল। আজ অবধি কখনও এরকম দেখিনি। ট্রেনের গতিও নেহাত কম ছিল না। প্ল্যাটফর্মের শেষে স্টপ লেখা যে কাঠের পাটাতনটি ছিল। তা ভেঙে ঢুকে যায় ট্রেনের বাফার।
ধাক্কার তীব্রতায় পিছনের দিকের কয়েকটি কামরা লাইন থেকে বেরিয়ে যায়। ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তখন দাঁড়িয়েছিল আরেকটি ট্রেন। ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের লাইনচ্যুত কামরাগুলি গিয়ে পড়ে তার গায়ে। সৌভাগ্যবশত পাশের ট্রেনটির দরজায় কেউ দাঁড়িয়ে ছিলেন না। কারণ, সেক্ষেত্রে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। কারণ, পাশের ট্রেনের সঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের এক হাতও ফাঁক ছিল না।
ব্যস্ত অফিস টাইমে এই ঘটনার জেরে গোটা শিয়ালদা স্টেশনেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ঘটনাগ্রস্থ ট্রেনের ভিতরে তখন তছনছ দশা। এর ওর ঘাড়ে পড়ে রয়েছেন যাত্রীরা। কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, কেউ আতঙ্কে চিৎকার করছেন। ধীরে ধীরে তাঁদের বার করে আনার কাজ শুরু হয়। তারপর পাঠানো হয় বি আর সিংহ এবং এনআরএস হাসপাতালে।
মফস্বল থেকে শহরে আসার লাইফ লাইন এই লোকাল ট্রেন। প্রতিদিন এই দক্ষিণ শাখাতেই যাতায়াত করেন হাজার হাজার যাত্রী। কিন্তু, সেই যাত্রা আদৌ নিরাপদ তো? বুধবার সকালের পর থেকে বারবার শুধু সেটাই মনে হচ্ছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের চালক ও গার্ডকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
রেল কর্তারা আপাতত খতিয়ে দেখছেন, ট্রেনটি নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়াল না কেন? পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, যেখানে দাঁড়ানোর কথা ছিল, সেখানে দাঁড়ায়নি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে স্পিড কমই ছিল। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবারের মধ্যে রিপোর্ট। আপাতত চালক ও গার্ডকেই দায়ী করছি।
রেলের তরফে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা হচ্ছে না। তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ব্রেক কাজ না করার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। লোকাল ট্রেন থামাতে চালকরা ইলেকট্রো নিউম্যাটিক ব্রেক ব্যবহার করেন। এই ব্রেক কাজ না করলে আপৎকালীন ব্রেক কষতে হয়। তবে আপৎকালীন ব্রেক অ্যাকটিভ করতে কিছুটা সময় লাগে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হতে পারে এদিন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির ইলেকট্রো নিউম্যাটিক ব্রেক শেষ মুহূর্তে কাজ করেনি। কিন্তু, ততক্ষণে ট্রেন অনেকটা এগিয়ে যাওয়ায়, চালক আপৎকালীন ব্রেক কষারও সময় পাননি। তাই ট্রেনটি গিয়ে ধাক্কা মারে গার্ড ওয়ালে।
তাছাড়া আরও একটা প্রশ্ন জোরাল হচ্ছে। ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কেন কোনও বাফার ছিল না কেন? ট্রেনের সামনে যেমন স্প্রিং বাফার থাকে। তেমন প্ল্যাটফর্মের সামনেও একটি স্প্রিং বাফার থাকে। ট্রেন সেই বাফারে ধাক্কা মারলে স্প্রিং থাকার কারণে অভিঘাত অনেকটা সামলে দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু, যে ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনটি ধাক্কা মারে, সেখানে কোনও বাফারই ছিল না। ফলে সরাসরি কাঠের পাটাতনে ধাক্কা মারে ট্রেন।
শিয়ালদা স্টেশনে ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের গার্ডওয়ালে ধাক্কা সোনারপুর লোকালের, জখম ২১ যাত্রী, সাসপেন্ড চালক ও গার্ড
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
19 Jul 2017 10:51 AM (IST)
কলকাতা (calcutta) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -