কলকাতা: পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্যে তৃণমূলের অন্দরেই বিতর্ক। যা ছিল, তার চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে প্রেসিডেন্সির, দাবি দলীয় সাংসদ সুগত বসুর। কেন বলছেন জানি না, কোনও ব্যক্তিগত কারণ থাকতে পারে, মত উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার।
ক’দিন আগেই যাদবপুরের সঙ্গে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেছিলেন, যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, এই কলেজগুলির সামনে দিয়ে গেলে নিজেদের হা-হুতাশ হত। যে জীবনে অনেক কিছু করা যেতে পারে, কিন্তু এই কলেজগুলো, ইউনিভার্সিটিতে পড়া গেল না। আজকে পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। আজকে আর মনে হয় না। এখন মনে হয় ভাগ্যিস কলেজগুলিতে পড়িনি।
শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েতমন্ত্রী দাবি করেন, ৩ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হোক। বলেছিলেন, সিকিউরিটি থাকে বলে ওখানে অন্য নানা রকম, ঠিক সমাজ জীবনের শিক্ষিত জিনিস ঘটে না। মনে হয় যে, তিন বছরের জন্য বন্ধ রাখলে ভাল হয়।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সিতে দাঁড়িয়েই তৃণমূল সাংসদ তথা ইতিহাসবিদ সুগত বসু জানালেন, অনেক উন্নতি হয়েছে। এদিন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপের বৈঠক শেষে চেয়ারম্যান সুগত বসু স্পষ্ট বক্তব্য, একাডেমিক পরিকাঠামো ঘুরে দেখলাম। আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে প্রেসিডেন্সির। আরও বললেন, যে অবস্থায় প্রেসিডেন্সিকে পেয়েছিলাম, সে তুলনায় অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রেসিডেন্সিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
সুগতবাবুর এই মন্তব্যের পরই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে শাসকের অন্দরেই মতভেদ স্পষ্ট? সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাম না করে সুগত জবাব দিলেও, পঞ্চায়েতমন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া-ও। বললেন, কেন বন্ধ হবে প্রেসিডেন্সি, যখন এত ভাল কাজ হচ্ছে। তাঁর মতে, (পঞ্চায়েতমন্ত্রীর মন্তব্যের নেপথ্যে) নিশ্চয়ই কোনও ব্যক্তিগত কারণ রয়েছে।
শুধু মান নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাজকর্ম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন সুব্রত। বলেছিলেন, সভ্যতা-ভব্যতা রেখে, পোশাক-আশাকে ভব্যতা রেখে আন্দোলন করুক না। করতেই পারে। একটা রুমালে যতটুকু কাপড় আছে, তার মধ্যে হয় তাহলে নিশ্চয় আমাদের কাছে অপসংস্কৃতি। কাপড়টা একটু বেশি থাকতে হবে। ভিতরে যা হয় সে আমি মাইকে বলতে পারব না।
শাসক দলের মন্ত্রীর দাবি সরাসরি খারিজ করে দিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছেন প্রসিডেন্সির উপাচার্য। বলেছেন, এমন কিছু হয় না যা মাইকে বলা যাবে না। কোনটা শালীন, কোনটা অশালীন পোশাক, তা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়।
নাম না করে সুব্রতর মন্তব্য খারিজ করেছেন সুগত। এক ধাপ এগিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছেন উপাচার্য।
সমালোচকদের মতে, সুব্রতর মন্তব্য ঘিরে বিড়ম্বনা ক্রমেই বাড়ছে শাসক দলের। যদিও এদিন এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এদিন মেন্টর গ্রুপের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রেসিডেন্সির সংস্কার সংক্রান্ত যে সুপারিশগুলি মেন্টর গ্রুপ করেছিল, তা কতটা কার্যকর হয়েছে, সে সংক্রান্ত রিপোর্ট খুব তাড়াতাড়িই পাঠানো হবে সরকারের কাছে। সূত্রের খবর, সে রিপোর্টে থাকবে, সুপারিশ কার্যকরের ফলে কতটা উন্নতি হয়েছে প্রেসিডেন্সির। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, তার ফলে আরও বিড়ম্বনা বাড়বে সরকারের।