কলকাতা: সঞ্জয় রায়ের মত্যু অ্যাপোলো হাসপাতালের চরম গাফিলতির ফলেই। পাশাপাশি, ভুয়ো তথ্য দিয়ে বিলে কারচুপি। অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর সব অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দিল স্বাস্থ্য অধিকর্তার নেতৃত্বাধী তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
সূত্রের দাবি, রিপোর্টে বলা হয়েছে, অ্যাঞ্জিও এম্বোলাইজেশনের পরও সঞ্জয় রায়ের লিভার থেকে যে রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছিল, তা বুঝতেই পারেননি চিকিৎসকরা। কারণ, তাঁকে ঘুমের ওষুধের ওভারডোজ দেওয়া হয়েছিল। নিহত সঞ্জয় রায়ের স্ত্রী রুবি রায়ের দাবি, হাসপাতালের তরফে বলা হয় অপারেশন খুব ভাল হয়েছে।
সূত্রের দাবি, তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, অ্যাপোলো হাসপাতালে সঞ্জয় রায়ের একবার মাত্র লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া করা হয়। কিন্তু বিলে দেখানো হয় তাঁর চারবার মেজর অ্যানেস্থেশিয়া করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকাল অ্যানেস্থেশিয়ার খরচ আড়াইশো টাকা। আর মেজর অ্যানেস্থেশিয়া করতে তার দশগুণ বেশি-- আড়াই হাজার টাকা।
সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া রিপোর্টে তদন্ত কমিটি আরও জানিয়েছে, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে থাকাকালীন সঞ্জয় রায়কে বারবার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডক্টর এবং কনসালট্যান্টরা দেখেছেন বলে বিল করা হয়েছে। অথচ তার জন্য বিল করার কথা নয়।
এর আগে স্বাস্থ্য দফতরের ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি ২০০ পাতার রিপোর্ট জমা দেয়, তাতে যেসব দাবি করা হয়, স্বাস্থ্য অধিকর্তার নেতৃত্বাধী তিন সদস্যের কমিটির রিপোর্টেও উঠে এল কার্যত একইরকম তথ্য।
কিন্তু, গাফিলতি থেকে কারচুপি--এই ঘটনায় কারা জড়িত? সূত্রের খবর, শুক্রবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান থেকে শুরু করে নাম ধরে ধরে ৮-১০ জনের উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী।
অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়েই আলোচনা হয় বৈঠকে। আইনে এবিষয়ে কী কী সংস্থান রয়েছে, সেবিষয়েও বিশেষজ্ঞদের শলা পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে নবান্ন সূত্রে দাবি। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এদিন জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতর আলাদা আলাদা তদন্ত করে দেখছে।এখন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা নিজেরা বসেছেন। তারপর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা পড়বে। এখনও অনেক তথ্য অনুসন্ধান বাকি।


পরে সাস্থ্যসচিব জানান, সঞ্জয়কাণ্ডে কোথায় গাফিলতি, চিহ্নিত করা হয়েছে বিলিং সহ একাধিক বিষয়। প্রমাণ মিলেছে অ্যাঞ্জিও এম্বোলাইজেশনের। সিডির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে কমিটির। আরও পরীক্ষার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান,  গাফিলতিতে বেশ কিছু নাম চিহ্নিত হয়েছে। তাদের মধ্যে চিকিত্সকও রয়েছেন। ভারতীয় দণ্ডবিধি মেনেই আইনি ব্যবস্থা। বিশ্বাসভঙ্গ, তোলাবাজির বিষয়গুলি পুলিশ দেখবে।
অন্যদিকে, অ্যাপোলোর চার চিকিৎসককে শুক্রবার ফের ফুলবাগান থানায় তলব করা হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। তবে কলকাতা অ্যাপোলোর সিইও রাণা দাশগুপ্তর কাছে এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া চাইলে তিনি বলেন, আমরা এই রিপোর্ট হাতে পাইনি বা দেখিনি। ফলে এনিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।