কলকাতা: অ্যাপোলোর কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে বিলের যেটুকু বাকি ছিল, তা-ও চুকিয়ে দিয়ে এলেন মৃত সঞ্জয় রায়ের স্ত্রী রুবি রায়। কোলে দু’বছরের ছেলে। এদিন সাংবাদিকদের সামনে তিনি অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। বলেন, বন্ধকীর কারবার খুলে রেখেছে। টাকা দিয়ে ছাড়াতে এসেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বকেয়া টাকা নেবে না বলে প্রশ্ন করা হলে সদ্য স্বামীহারা মহিলার পাল্টা, এই মানবিকতা কোথায় ছিল তখন? এখন তো আর মানুষটাকে ফেরত পাব না!
অ্যাপোলোর দয়া না নেওয়ার ইঙ্গিত রুবি শুক্রবারই দিয়েছিলেন এবিপি আনন্দর ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানে। চিকিৎসা বাবদ যে পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়েছে,তা সঞ্জয়ের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষের ঘোষণার প্রেক্ষিতে রুবি বলেছিলেন, চাই না ওই টাকা। ওটা দিয়ে ফাইভ স্টার হোটেল করুক।
অ্যাপোলোতে সঞ্জয়ের চিকিৎসার বিল হয় ৭ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা। শুক্রবার পর্যন্ত চেয়েচিন্তে চার লক্ষ টাকার কিছু বেশি মেটাতে পেরেছিলেন রুবিরা। অভিযোগ, বিল বকেয়া থাকার জন্যই সঞ্জয়কে এসএসকেএমে নিয়ে যেতে বাধা দেয় অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ। কাকুতি মিনতিতে কাজ না হওয়ায় জমা রাখতে হয় রায় পরিবারের শেষ সম্বল ফিক্সড ডিপোজিটের নথিও। এদিন সঞ্জয়ের দিদি বলেন, বাধ্য হয়ে এফডির নথি জমা রেখেছি। সময় নষ্ট হয়েছে। ভাইকে বাঁচাতে পারিনি।
সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর প্রবল বিতর্কের মুখে অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ জানায়, সঞ্জয়ের পরিবারের এফডি-র নথি এবং পরিবারের দেওয়া টাকা তারা ফেরত দিয়ে দেবে। কিন্তু, যাদের শাস্তির জন্য চোখের জল মুছে লড়াইয়ে নেমেছেন, তাদেরই সামনে টাকার জন্য হাত পাতবেন! এটা ভাবতেও আত্মসম্মানে বেধেছে রুবির। এদিন তিনি সাফ জানিয়ে দেন, টাকা নয় শাস্তি চাই। প্রত্যেকের শাস্তি চাই।
অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব সুবীর চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে রয়েছেন, সরকারি হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। একজন সিনিয়র সার্জেন। একজন রেডিওলজিস্ট। একজন অ্যানেস্থেশিস্ট। একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট। এবং একজন সিজিওলজিস্ট। নবান্ন সূত্রে খবর, চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে, সংশ্লিষ্টপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করবে এই কমিটি। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যসচিব এই ঘটনায় একটি রিপোর্ট দিয়েছেন। যাতে অ্যাপোলোর গাফিলতির উল্লেখ রয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে দাবি।
অন্যদিকে, সঞ্জয় রায়ের পরিবার ফুলবাগান থানায় যে এফআইআর করেছে, তার প্রেক্ষিতেও তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে। মামলার গুরুত্ব বুঝে কোনও সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসারের বদলে এই মামলার তদন্তকারী অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে ফুলবাগান থানার অতিরিক্ত ওসি সুমন নস্করকে। তদন্তের নেতৃত্বে রয়েছেন ওসি পীযূষ কুন্ডু।
সঞ্জয় রায়ের স্ত্রী রুবি রায় রবিবার অ্যাপোলোর চিকিৎসক শ্যামল সরকার ও অন্যান্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে গাফিলতির জেরে মৃত্যু, তোলাবাজি এবং একই উদ্দেশে অপরাধ সংগঠনের মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, ইতিমধ্যে অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষের কাছে নথি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।