কলকাতা: কেবল নারী কেন, ফ্যাশানের আইকন তো হতে পারেন পুরুষও। শর্বরী দত্তই প্রথম একথা বলার সাহস দেখিয়েছিলেন। তাঁর কল্পনায়, সৃষ্টিতে মিশেছিল ঐতিহ্য আর শিকড়ের প্রবল টান।পুরুষকে তিনি সাজিয়েছেন বাঙালি সংস্কৃতির অপরূপ নকশায়। ডিজাইনার শর্বরীর অনুরাগীর তালিকা সুদীর্ঘ। কপিল দেব, সুনীল গাওস্কর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিন তেণ্ডুলকর, অক্ষয় কুমার, প্রসেনজিত্‍ চট্টোপাধ্যায়, লিয়েন্ডার পেজ - থেকে শুরু করে স্বনামধন্য বহু ভারতীয় পুরুষ ফ্যাশনের পাঠ নিয়েছেন শর্বরীর কাছেই। ঐশ্বর্যা-অভিষেকের বিয়ের সময় শর্বরীর কাছ থেকে পোশাক নিয়ে গিয়েছিলেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের মা বৃন্দা রাই। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ টলিপাড়া।


২০-২২ বছর আগে প্রথম শর্বরীর জন্য মডেলিং করেছিলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, 'পশ্চিমবঙ্গে পুরুষদের জন্য প্রথম পোশাক বানিয়েছিলেন শর্বরী দত্ত। ২০-২২ বছর আগে আমিই প্রথম মডেলিং করেছিলাম শর্বরীদির জন্য। পরে আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওনাকেই বলতাম। আমার টেস্টটা উনি বুঝতেন। শর্বরীদি একজন ভালো মনের মানুষ, একজন লেজেন্ড।' অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত শোকপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, 'একটা যুগের পতন হল। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না শর্বরীদি নেই। আমার বরের বিয়ের ২টো পাঞ্জাবিই ওনার করা।' অভিনেতা দেব ট্যুইট করে লেখেন, 'কয়েকমাস আগেই আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না কিভাবে এটা ঘটল। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।'

শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় বলছেন, 'আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা খুব বড় ক্ষতি। ভীষণ প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন, আমার ভীষণ স্নেহ করতেন।' শর্বরী দত্তর সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরা। আজ শোকপ্রকাশ করে তিনি বলেন, 'খবরটা শুনে আমি অবাক। জানি না কী বলব। ওনার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভীষণ ভালো ছিল।' অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলছেন, ' খবরটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল ওনার সঙ্গে। মাতৃস্নেহে আমায় ডেকে বলেছিলেন, ''অ্যাই শোনো শোনো, তোমার অভিনয় আমি ফলো করি। কিন্তু তোমায় যে পোশাক পরানো হয় সবসময় সেগুলো সঠিক হয় না। এটা তুমি বোলো শর্বরীদি বলেছেন।'' আমায় একটা জহরকোট উপহার দিয়েছিলেন। সবসময় আমায় বলতেন, ''তুমি রঙিন পোশাক পরবে। তোমায় তাতে মানায়।''' অভিনেত্রী পূজারিনি ঘোষ জানিয়েছেন, 'এখনও মনে হচ্ছে খবরটা সত্যি না হলে ভালো হত। আমি খুব সম্প্রতি কিছু কাজ করেছি ওনার সঙ্গে। আমাদের গর্ব করার মতো জায়গা ছিলেন উনি। বড় ক্ষতি হয়ে গেল।' অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ বলেছেন, 'সকালে ঘুম ভাঙল এই খবর শুনে যে শর্বরীদি আর আমাদের মধ্যে নেই। খুব অল্প বয়সে ওনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। সবসময় উনি আমায় বুঝিয়েছেন আমি খুব জরুরি একজন মানুষ। আমায় ও সুন্দরী, ও ডিভা বলে কথা বলতেন।' অভিনেত্রী অমৃতা চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ' এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না খবরটা। একবার ছবির প্রচারে একটা অনুষ্ঠানে ওনার শো-রুমে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে বসে উনি একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন।'

অন্যদিকে গায়িকা উষা উত্থুপ বলছেন, 'অনেকের কাছেই উনি মাতৃসম ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আমার কাছে উনি কেবল শর্বরীদি। আমরা সবসময় তোমায় ভালোবাসব, মনে রাখব শর্বরীদি।' সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায় বলছেন, 'আজ সকালে খবরটা শুনে আমি হতবাক। আমার সঙ্গে দেখা হলে ফ্যাশান নিয়ে অনেক কথা বলতেন। শর্বরীদি একজন স্বতঃস্ফুর্ত ডিজাইনার।' গায়িকা ইমন চক্রবর্তী বলেছেন, 'আমার এখনও মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে। শর্বরীদি অত্যন্ত প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন। আমার কোনও গান মুক্তি পেলে আমি ওনাকে পাঠাতাম। সবসময় তার উত্তর দিতেন। ভালোলাগার কথা জানাতেন। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি।'