কলকাতা: রাতের শহরে ফের বেলাগাম দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য। মল্লিক বাজারে ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুন। নিহত ব্যবসায়ী এলাকায় তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত। পুলিশ সূত্রে দাবি, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয়েছে দুই দুষ্কৃতীকে। আটক নিহত ব্যবসায়ীর ইমারতি ব্যবসার দুই অংশীদার।


 

পরিবারের দাবি, নির্মাণ সামগ্রীর কারবারি নূর মহম্মদকে ফোন করে ডাকেন তাঁর ব্যবসার দুই অংশীদার কেলো এবং সফিক। বলেন, নির্মাণ সামগ্রী এসেছে, টাকা মিটিয়ে মাল খালাস করতে হবে। সেই মতো পাড়ার একজনকে দিয়ে পার্টনারদের কাছে টাকা পাঠান নূর। কিন্তু, পরিবারের দাবি, একজন পার্টনার ফের ফোন করে বলেন, নূরকেই আসতে হবে। এরপর, দ্রুত বাড়ি থেকে বেরোন বছর পঞ্চান্নর নূর। কিন্তু মল্লিকবাজারের নর্থ রেঞ্জ রোডে ওঠামাত্রই বাইক আরোহী দু’জন তাঁকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন এই ব্যবসায়ী।, যিনি এলাকায় তৃণমূল নেতা বলেও পরিচিত।

 

খুনের তদন্তে নেমেছে বেনিয়াপুকুর থানা ও কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখা। নিহত ব্যবসায়ীর মেয়ের দাবি, বাবার খুনের ইনসাফ চাই।

 

পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে,  নূরকে যেখানে গুলি করে খুন করা হয়, সেখানকার একটি স্কুলের সিসিটিভি ক্যামেরায় গোটা ঘটনাটি ধরা পড়েছে। ফুটেজ খতিয়ে দেখে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

এই হত্যা কি সিন্ডিকেট-কোন্দলের পরিণাম? এলাকা দখলের লড়াইয়ের জেরেই কি মাঝরাতে হামলা করে খুন করা হল নূরকে? নিহতের ভাই মহম্মদ সাবির বলেছেন, ওর শত্রু ছিল। এলাকায় কে বড়, তা নিয়ে পাড়ায় একজনের সঙ্গে বছর পাঁচেক আগে ঝামেলা হয়েছিল ভাইয়ের। এ বলত এ বড়, ও বলত ও বড়।

 

স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত নূর মহম্মদ ইমারতি সামগ্রীর কারবার করতেন। এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এই সব ব্যবসায় রেষারেষির কারণেই তাঁকে খুন করা হল? নাকি পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? রহস্য উদঘাটনে সিআইডি তদন্ত চেয়েছে নিহতের পরিবার। নিহতের জামাইয়ের বক্তব্য,  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে চাই, ইনসাফ চাই। আমরা তো ওদের দলের লোক। ও দীর্ঘদিন ধরে টিএমসি করত। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা যাব। আমরা আশাবাদী দিদির কাছে ন্যায় পাব। আমরা সিআইডি তদন্ত চাই।

 

শনিবার নূরের নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল নেতা তথা কলকাতার ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, নিহত ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করতেন। পাশাপাশি, বেনিয়াপুকুর থানা উপর তিনিও অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।  বলেছেন, ও আমাদের দলের অনেক পুরনো। ৩০-৩৫ বছর। খারাপ সময়েও ছিল। লালবাজার তদন্ত করুক। স্থানীয় থানা পারবে না। থানা ধরতে পারবে না।

 

ইকবালের দাবি, এই ঘটনায় রাজনীতির কোনও যোগ নেই। তাহলে কেন এভাবে খুন? পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাস্থলে থাকা নূরের দুই অংশীদার দাবি করেছেন, তাঁদের সামনেই গুলি করে বাইকে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা! কিন্তু, তারা কারা? কেন খুন করল? দানা বাঁধছে রহস্য।

 

সাম্প্রতিক কালে বার বার সিন্ডিকেট সংঘর্ষে রক্ত ঝড়েছে। প্রাণ গিয়েছে। ক’দিন আগেই ধুন্ধুমার হয়ে ওঠে বেকবাগান রো। সূত্রের খবর, কার পার্কিংয়ের দখলদারি ঘিরেই সেদিন এলাকায় তাণ্ডব চলে। কয়েকদিনের ব্যবধানে এবার মল্লিকবাজারে প্রকাশ্যে খুন হলেন ব্যবসায়ী!