কলকাতা:মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যু এবং বিক্রমের গ্রেফতারির পর থেকে রাজ্য পুলিশের মাথাব্যথার কারণ ছিল একটাই নাম। রঞ্জিত পাল। বুধবার সেই রঞ্জিতই ভবানী ভবনে রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে আত্মসমর্পণ করল। সঙ্গে রঞ্জিতের স্ত্রী ঝর্না গিরি ওরফে অনিতা পাল।


কে এই রঞ্জিত পাল? কীভাবে তার মাওবাদী সংগঠনে আসা? কেন সে পুলিশের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড ছিল?

রঞ্জিত পাল আদতে বাঁকুড়ার বারিকুল থানার খেজুরখেন্না গ্রামের বাসিন্দা।

ছোট থেকে পড়াশোনায় ভালই ছিল। কিন্তু, তরুণ বয়সে হঠাৎই অতিবামপন্থায় ঝোঁক আসে। শেষমেশ ২৮ বছর বয়সে পাকাপাকিভাবে সংগঠনে নাম লেখানো।

চেহারা ছোটখাটো। দেখতে শান্তশিষ্ট। কিন্তু, এহেন চেহারার রঞ্জিতই ছিল পুলিশের কাছে ত্রাস!

অসম্ভব ক্ষিপ্ত। ভয়ডরের লেশমাত্র নেই। আর রঞ্জিতের সবথেকে বড় ক্ষমতা, সে গেরিলা কায়দায় যুদ্ধে পারদর্শী।

প্রথমবার পুলিশের খাতায় তার নাম উঠে আসে ২০০৫ সালে। বারিকুল থানার তৎকালীন ওসি প্রবাল সেনগুপ্ত খুনের ঘটনায়। ব্যাগে প্রেসার বম্ব রেখে ওসিকে খুনের এই ফুলপ্রুফ ছক কষে রঞ্জিতই। এরপর কখনও পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে পুলিশের ওপর হামলা, কখনও শিলদায় ইএফআর ক্যাম্প থেকে অস্ত্র লুঠের মতো বড় ঘটনায় রঞ্জিতের নাম উঠে আসতে থাকে।

২০১০ সালে পুরুলিয়া থেকে পুলিশ অফিসার পার্থসারথি বিশ্বাস ও শিক্ষক সৌম্যজিৎ বসু নিখোঁজ হন।অভিযোগ, তাঁদের দু’জনকেই তুলে নিয়ে যায় রঞ্জিতের বাহিনী। একবছর পর দু’জনেরই কঙ্কাল উদ্ধার হয়।

মাওবাদীদের মধ্যে তড়িৎ, রাহুল, রোহিত নামেও সমান পরিচিত ছিল রঞ্জিত।

বর্তমানে মাওবাদীদের রাজ্য মিলিটারি কমিশনের সদস্য ছিল সে।

এছাড়া BJOBRC অর্থাৎ বাংলা ঝাড়খণ্ড ওড়িশা বর্ডার রিজিওনাল কমিটির অন্যতম এরিয়া কমান্ডারও ছিল রঞ্জিতই।

সূত্রের খবর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় সেখানে সক্রিয় ছিল রঞ্জিত।

জমি আন্দোলন ঘিরে নন্দীগ্রাম যখন জ্বলছে, তখন কাটা রাস্তা পেরিয়ে এক পুলিশকর্তা বাইক নিয়ে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাঁর নজরে এসেছিল মাও নেতা রঞ্জিতের গতিবিধি। সূত্রের খবর, নন্দীগ্রাম থেকে ফিরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সেই রিপোর্ট দিয়েছিলেন ওই পুলিশকর্তা।

এখন রঞ্জিত যখন আত্মসমর্পণ করছে, তখন সেই পুলিশকর্তাও কলকাতা পুলিশের উচ্চপদে রয়েছেন! নন্দীগ্রামে থাকার সময়ই রঞ্জিতের সঙ্গে তার স্ত্রী ঝর্না গিরি ওরফে অনিতার পরিচয় হয়।

নন্দীগ্রাম ছাড়ার পর

বাংলা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী জঙ্গলঘেরা পাহাড়ে মাওবাদীদের ট্রেনিং দিত রঞ্জিত।

রঞ্জিতের আত্মসমর্পণের পর মাওবাদীদের যে শীর্ষনেতারা এখনও অধরা, তারা হল

আকাশ ওরফে অসীম সরকার।

মদন মাহাতো।

জয়ন্ত

এবং  সচিন।

তবে পুলিশ সূত্রে দাবি, জাগরী বাস্কে....সুচিত্রা মাহাতোর....পর রঞ্জিতের মতো শীর্ষ নেতার আত্মসমর্পণে মাওবাদীদের কোমর আরও ভেঙে যাবে। সেক্ষেত্রে বাকিদের ধরার পথ মসৃণ হবে। নয়তো তারা আত্মসমর্পণেও বাধ্য হতে পারে।