কলকাতা: নোট বাতিলের প্রভাব পড়েছে বাংলায়। সমাধানের চেষ্টা করেছে রাজ্য সরকার। বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের সূচনায় বললেন রাজ্যপাল।
নোট বাতিলের ঘোষণার দিন থেকেই আন্দোলনমুখী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য থেকে প্রতিবাদ ছড়িয়ে দিয়েছেন দিল্লি, লখনউ, পটনা পর্যন্ত। এবার কেন্দ্র বিরোধিতার সেই সুরই বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিন রাজ্যপালের ভাষণে শোনা গেল।
এদিন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেন, পশ্চিমবঙ্গেও মুদ্রারহিতকরণের প্রভাব পড়েছে। বহু সংখ্যক লোক, দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। রাজ্য সরকার আশঙ্কা করছে যে, রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। এর জেরে লক্ষ লক্ষ কর্মীদের তাঁদের চাকুরি ও জীবিকা খুইয়েছেন। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বিড়ি, চট, চা বাগানের শ্রমিক, ব্যবসায়ী, দোকানদার ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সমবায়গুলি। কৃষি ঋণ না মেলায় চাষেরও ক্ষতি হচ্ছে।
শুক্রবার, নেতাজি ইন্ডোরের ‘পঞ্চায়েত সম্মেলনে’ কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে ফের সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, বাংলাকে প্রাপ্য টাকা দিন। জ্ঞান দেওয়ার দরকার নেই। আপনাদের দেনা, শোধ না করতে হলে, আরও ভাল কাজ করতাম। বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণেও উঠে এসেছে এই প্রসঙ্গ। কেশরীনাথ বলেন, আগের সরকারের আমলে ঋণের বোঝা, এই সরকারকে বহন করতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও সরকার সমস্ত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় সফল। সুদ ও আসল মিলিয়ে এবছর সরকারকে, ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ মেটাতে হবে।
জঙ্গলমহল থেকে পাহাড়। নানা ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রাজ্যপাল। বলেন, পাহাড়ে একসময় নিরন্তর বিশৃঙ্খলা ছিল। কিন্তু অদম্য মানসিকতার অধিকারিণী মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর শাসনের দ্বিতীয় পর্বেও পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে পেরেছেন। এই সরকার এসে, নাশকতামূলক কাজকর্ম পিছনে ফেলে, জঙ্গলমহলের সর্বাত্মক উন্নয়ন করতে পেরেছে। একদিকে শান্তি, অন্যদিকে, উন্নয়ন। এই দুইয়ের মধ্যে দিয়ে জঙ্গলমহলে স্থায়ী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে এসেছে।
সিঙ্গুরে জমি ফেরত থেকে রাজ্যের শিল্পসম্ভাবনা, কর্মসংস্থান-- রাজ্যপালের ভাষণে সবকিছুই জায়গা পেয়েছে। কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেছেন, বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলন সফল হয়েছে। বহু শিল্পপতি, ২৯টি দেশ অংশ নিয়েছে। ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ৫ বছরে রাজ্যের অর্থনীতির আয়তন ৪.৬ লক্ষ কোটি থেকে ৯.৫ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে। গত ৫ বছরে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে ঋণদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১.২ লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। ৬৮ লক্ষ কর্মসংস্থানের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হয়েছে।
বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে, নিজেদের কথা রাজ্যপালকে দিয়ে বলিয়ে নিল সরকার। বিধায়ক দিলীপ ঘোষ বলেন, রাজ্যপালের ভাষণ শুনে মনে হল, স্বর্গে বসে আছি, আসলে তো আছি নরকে! আসলে মুখ্যমন্ত্রীর কথা রাজ্যপালকে দিয়ে বলানো হল। নোটবন্দি নিয়ে রাজ্যপালের বিরোধিতা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, কী আর করা যাবে? নিয়মকে আমরা শ্রদ্ধা করি। বাজেট অধিবেশন শুরুর দিন, সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে একই কথা বলেছিল কংগ্রেস। তারা কটাক্ষ করে বলেছিল, রাষ্ট্রপতির ভাষণ মোদী সরকার লিখে দিয়েছে, তাই এক্ষেত্রে তিনি অসহায়!
ভাঙড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে এদিন প্ল্যাকার্ড নিয়ে অধিবেশন কক্ষে ঢোকেন বাম বিধায়করা। ভাষণ শেষ করে, রাজ্যপালের বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও স্লোগান দেন তারা।