কলকাতা: দুর্ঘটনাকাণ্ডে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ভোলবদল অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের। বললেন, ঘটনার দিন মদ্যপান করলেও, তিনি বেসামাল ছিলেন না। যদিও এর আগে সাংবাদিক বৈঠকে বিক্রম মদ্যপানের কথা অস্বীকার করেন।
জামিন পেয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে বিক্রম চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, দুর্ঘটনার রাতে তিনি মদ্যপান করেননি। কিন্তু পুলিশের ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সেই বিক্রমের গলাতেই শোনা গেল অন্য সুর! পুলিশ সূত্রে দাবি, মঙ্গলবার রাতে বিক্রমকে প্রশ্ন করা হয়, গাড়ি চালানোর সময় আপনি কি মদ খেয়েছিলেন? বিক্রম বলেন, হ্যাঁ আমি মদ খেয়েছিলাম।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, পানশালায় উপস্থিত সনিকার বান্ধবীরা আগেই দাবি করেছিলেন, তাঁরা সেই রাতে দেখেছিলেন, বিক্রম মদ্যপান করেছিলেন!
অভিশপ্ত রাতে বিক্রম-সনিকার বেশ কয়েকজন সঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, তাঁরাও পুলিশকে একই কথা জানিয়েছেন!
পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার রাতে একাধিক পানশালায় গিয়েছিলেন বিক্রম ও তাঁর সঙ্গীরা। এর মধ্যে একটি পানশালার বিল বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেখানে ৪ পেগ মদ অর্ডার করা হয়েছিল।
পুলিশ সূত্রে আরও দাবি, বিক্রমরা যে যে পানশালায় গিয়েছিলেন, প্রত্যেক জায়গার বিল ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই সব পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ এবং সাক্ষীদের বক্তব্য শোনার পর, বিক্রম বুঝে যান, তাঁর মদ না খাওয়ার যুক্তি ধোপে টিকবে না! তাই পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মদ খাওয়ার কথা কবুল করতে বাধ্য হন তিনি! যদিও পাঁচই মে সম্পূর্ণ অন্য কথা বলেছিলেন তিনি!
তবে পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের সময়, বিক্রম দাবি করেছেন, মদ খেলেও, তিনি মত্ত হয়ে যাননি। গাড়ি চালানোর মতো অবস্থায় ছিলেন! মদ খেয়ে বিক্রম বেসামাল হয়েছিলেন কিনা তা তদন্তেই স্পষ্ট হবে বলে মনে করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে আরও দাবি, মঙ্গলবার রাতে বিক্রমকে জিজ্ঞেস করা হয়, তাঁর গাড়ির কি ব্রেক ফেল করেছিল? অভিনেতা বলেন, না। পুলিশ জানতে চায়, তাহলে কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল? বিক্রম দাবি করেন, তিনি মনে করতে পারছেন না! বলেন, সম্ভবত ট্রাম লাইনে চাকা পিছলে গিয়েছিল!
এরপর তদন্তকারীরা জানতে চান, সেই সময় কত জোরে গাড়ি চলছিল? পুলিশ সূত্রে খবর, বিক্রম দাবি করেন, একশোর ওপরে গাড়ি চালাইনি। গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিমি।
যদিও পুলিশ সূত্রে দাবি, বিক্রমের এই দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে তদন্তকারীদের মনে। তাঁরা মনে করছেন, সত্যিই যদি ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলত, তাহলে এই পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হত না!
পুলিশ সূত্রে খবর, রহস্য উদঘাটনে বিক্রমের গাড়ির ‘ইলেকট্রনিক ডেটা রেকডার্রের’ বা ইডিআর তথ্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত, কোনও বিমান দুর্ঘটনাগ্রস্থ হলে, যেমন ব্ল্যাক বক্স থেকে তার কারণ জানা যায়, ইডিআর-ও অনেকটা সেরকমই। গাড়ি কত গতিবেগে চলছে, সেই তথ্য ইডিআর থেকে পাওয়া যায়।
সূত্রের দাবি, বিক্রমের গাড়ির ইডিআর ডিকোড করতে তা পাঠানো হবে, চেন্নাইয়ে। গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার সদর দফতরে। ডিকোডিং হয়ে গেলে, রিপোর্ট আসবে পুলিশের কাছে! তখনই জানা যাবে, দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে গাড়ির গতি কত ছিল? স্পষ্ট হবে বিক্রম সত্যি বলছেন নাকি মিথ্যে।
পুলিশ সূত্রে দাবি, জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চলাকালীন বিক্রমের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনার গাড়িতে কি অন্য কোনও গাড়ি ধাক্কা মেরেছিল?
কোনও গাড়ি চলে এসেছিল? প্রত্যুত্তরে বিক্রম বলেন, না অন্য কোনও গাড়ি দেখিনি! যদিও দুর্ঘটনার পর অন্য সুর শোনা গিয়েছিল বিক্রমের বাবার গলায়! তিনি বলেছিলেন, ওলা ড্রাইভার বলল, একটা গাড়ি গলি থেকে বেরিয়ে এসেছিল, ওটাকে পাশ কাটাতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে।
বিক্রমের বাবা একথা বললেও, এখনও কিন্তু, সেই ট্যাক্সি চালকের কোনও প্রকাশ্য বয়ান মেলেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরাও বারবার দাবি করছেন, দ্বিতীয় কোনও গাড়ি দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলই না! তাহলে কী হয়েছিল? উত্তর লুকিয়ে বিক্রমের গাড়ির ‘ইলেকট্রনিক ডেটা রেকডার্রের’ মধ্যেই!