সুদীপ্ত আচার্য,কলকাতা: রাজ্যের হিন্দু ব্রাহ্মণদের ভোট যাতে বিজেপির ঝুলিতে যায় তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিল বিজেপি। আজ, শুক্রবার ধর্মতলায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের সভায় উপস্থিত থেকে শুভেন্দু অধিকারী কোনওরকম রাখঢাক না করেই উপস্থিত ব্রাহ্মণ দর্শকদের উদ্দেশে বলেন তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি না বললেও রাজ্য সরকারের সমালোচনায় মুখর হলেন।
২০১৬ সালে রাজ্যের ব্রাহ্মণদের ভাতা প্রদান-সহ বিভিন্ন দাবিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট। শুরুর সময় এই সংগঠনের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী যুক্ত থাকলেও বিগত কয়েক বছর ধরে সংগঠনের হাল ধরেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন ধর্মতলার রানী রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ৯ দফা দাবিতে সমাবেশের ডাক দেয় এই ব্রাহ্মণ সংগঠন। রাজ্যের সমস্ত পূজারী ব্রাহ্মণদের ভাতা প্রদান, রাজ্যের সংস্কৃত পঠন-পাঠনের উন্নতি, টোল স্থাপন-সহ মোট নয় দফা দাবিকে সামনে রেখে আয়োজিত এই সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত হন।
রাজ্য বিধানসভায় বিধায়ক হিসাবে পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার পর এই মঞ্চে এসে, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে বলেন তিনি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন এবং উনি অন্য কোন দলে যোগ দেবেন কিনা সেই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে আজ বিকেলে তা জানিয়ে দেবেন। অরাজনৈতিক সমাবেশ বলা হলেও উপস্থিত রাজ্যের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সংগঠনের পদাধিকারীদের বক্তব্যে কিন্তু বারবার উঠে আসে ব্রাহ্মণদের প্রতি রাজ্য সরকারের সমালোচনার অভিযোগ।
মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন এই সংগঠনের আন্দোলনের জন্যই রাজ্য সরকার ব্রাহ্মণদের ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তবে স্বল্প সংখ্যক ব্রাহ্মণকে ভাতা দিয়ে রাজ্য সরকার আসলে 'আই ওয়াশ" করছে এবং এই "আই ওয়াশ" তিনি মানবেন না। তিনি বলেন, অন্য ধর্মের কোনও মানুষকে ভাতা দেওয়া হলে অসুবিধা নেই৷ কিন্তু একজনকে দেওয়া হবে, অন্যজনকে দেওয়া হবে না, এই অসাম্য তিনি মানবেন না। এরপর তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের মনে করিয়ে দেন "এরকম অনেক মানুষ আছেন যারা পুরোহিত নন কিন্তু তারা ভাতা পাচ্ছেন"। তিনি আরও বলেন যতদিন না পর্যন্ত সমস্ত ব্রাহ্মণ পুরোহিত ভাতা পাচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত এই আন্দোলন রাস্তায় নেমে চলবে। প্রাক্তন মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সমস্ত ব্রাহ্মণের ভাতার বিষয়ে তিনি চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেননি। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন তিনি মানুষের জন্য রাজনীতি করেন, আগামী দিনে যদি সুযোগ পান তাহলে মানুষের জন্য কাজ করবেন। রাজ্য সরকারের সরাসরি সমালোচনা করে সমাবেশের মঞ্চ থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যেভাবে বাংলার মানুষের সঙ্গে সরকার বঞ্চনা করছেন ঠিক সেই ভাবে ব্রাহ্মণদের সঙ্গেও বঞ্চনা করছে রাজ্য সরকার।
বক্তব্যের একদম শেষে এসে রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের বাণী মনে করিয়ে দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেন "ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছেন যত মত তত পথ, এই নীতি যারা মানবেন তাদের সঙ্গে তিনি থাকবেন"। আর তার এই বক্তব্যের পরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, ইদানিংকালে রাজ্যে এসে বিজেপির হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বারবার শ্রীরামকৃষ্ণের ভাব আদর্শের প্রতি তাদের সম্মানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।তবে কি শুভেন্দু অধিকারীর পথ ধরে অমিত শাহের জনসভায় বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়? রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যেহেতু আজকেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা পত্র জমা দিয়েছেন, কিন্তু এখনো নতুন দলে যোগ দেননি তাই এই মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারীর আসার কথা থাকলেও, রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী কিন্তু সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সমাবেশস্থল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক পরেই। রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী, প্রাক্তন বনমন্ত্রী র থেকেও আক্রমণাত্মক ছিলেন আজকের সভায়।
একসঙ্গে মঞ্চে না থাকলেও বক্তব্যের শুরুতেই শুভেন্দু অধিকারী তাঁর মন্ত্রিসভার একসময়ের সহকর্মী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়শী প্রশংসা করেন। শুভেন্দুবাবু বলেন, যদিও তারা মন্ত্রিসভায় ছিলেন কিন্তু সরকার চালাতেন একজনই, বাকি মন্ত্রীরা প্রত্যেকেই ল্যাম্পপোস্ট ছিল। প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী আশা করেন তিনি যে পরিবর্তনের আওয়াজ তুলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রীও তাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে সেই আওয়াজ তুলবেন। শুভেন্দুবাবু বলেন রাজ্য সরকার কয়েক মাস আগে যে আট হাজার ব্রাহ্মণকে ভাতা এবং বাড়ি করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে, সেই বাড়ি আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকায় করা হবে। এরপর বিস্ফোরক অভিযোগ করেন রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। তিনি বলেন "টিভিতে দেখলাম নদিয়া জেলায় যারা অব্রাহ্মণ এরকম মানুষ ব্রাহ্মণ ভাতা পেয়েছেন, তৃণমূল নেতারা ভাতা পেয়েছেন।"
তবে যে যাই বলুক না কেন, বিজেপি এ রাজ্যের মতুয়া ভোট ব্যাঙ্কের মতো হিন্দু ব্রাহ্মণ বর্ণের ভোটারদের মন আলাদা ভাবে জয় করতে পারবে কিনা তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আর কয়েক মাস, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত।