ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: খুলছে না হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট, করা যাচ্ছে না কোনও মেসেজ। অথচ আর্থিক সাহায্য চেয়ে পরিচিতদের কাছে যাচ্ছে একের পর এক মেসেজ! কলকাতার বুকে হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকের শিকার হলেন ইএনটি বিশেষজ্ঞ।

ই-মেল থেকে শুরু করে ফেসবুক, প্রতারকের জালে পড়ার তালিকাটা নেহাত কম নয়। কিন্তু এবার হ্যাকারদের হাতে হোয়াটসঅ্যাপও! নিশ্চিন্ত নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয় বলেই ভরসা অর্জন করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য থেকে ব্য়ক্তিগত কথা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের পছন্দের তালিকার এক নম্বরে রয়েছে হোয়াসটঅ্যাপ। কিন্তু সেই অ্যাপও যে নিরাপদ নয়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা।

অর্জুন দাশগুপ্ত কলকাতার একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ। অভিযোগ, শনিবার বিকেল থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারছিলেন না তিনি। খুলছিল না অ্যাপ, যাচ্ছিল না কোনও মেসেজও। প্রযুক্তিগত ত্রুটি মনে করে কিছুক্ষণ বিষয়টায় আমল দেননি তিনি। কিন্তু হুঁশ ফেরে অন্যভাবে। অর্জুন বলছেন,  ' হঠাৎ আমার পরিচিতরা আমায় ফোন করে জানান, যে আমি আর্থিক সাহায্য চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপ করেছি। উদ্বিগ্ন হয়ে সকলেই জানতে চান আমার কোন সমস্যা হয়েছে কিনা।'  এরপরেই হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক হয়েছে বলে নিশ্চিত হন চিকিৎসক। সাইবার ক্রাইম বিভাগে ইমেল করে অভিযোগ জানান তিনি।

পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন অর্জুন। সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  যে কোন অজানা নম্বর থেকে আসা অ্যাটাচমেন্ট বা কোন গ্রুপে পাঠানো লিঙ্ক ক্লিক করলে হ্যাকের শিকার হতে পারেন যে কেউ। এমন কোনও লিঙ্কে ক্লিক করলেই ব্যবহারকারীর অজান্তে তাঁর অ্যাকাউন্টে কবজা করে ফেলবে হ্যাকাররা। তারপর ব্যবহারকারীর মোবাইলে বন্ধ হয়ে যাবে হোয়াটসঅ্যাপ। কিন্তু সেই অ্য়াকাউন্টই চালু থাকবে হ্যাকারের ফোনে। এর ফলে ইচ্ছা মতো মেসেজ করতে পারবে সেই হ্যাকার। কাজেই অকারণে হোয়াসটঅ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলেই সতর্ক হওয়ার নিদান দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

কলকাতার এই ঘটনায়, ওই প্রতারক হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরিচিতদের বলেন যে তিনি বিপদে রয়েছেন। এরপর তাঁদের ক্রেডিট কার্ড নম্বর চেয়ে পাঠান তিনি। সৌভাগ্যবশত কেউই তা দেননি। ওই চিকিৎসকের আশঙ্কা, কেউ বিষয়টি বিশ্বাস করে নিলে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত। এমনকি যাঁরা টেকস্যাভি নন, তাঁদের ক্ষেত্রেও বড় ফাঁদ এই হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক।

কিছুদিন আগেই, ফেসবুকের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি হওয়ার খবরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু তখন নিরাপত্তার দিক থেকে আশ্বস্ত করেছিল হোয়াটসঅ্যাপ নির্মাতারা। কিন্তু জনপ্রিয় এই অ্যাপটিও যে নিরাপদ নয় সেই প্রমাণ ফের একবার সামনে এল।