মিউনিখ ও কলকাতা: বাংলায় বিনিয়োগের জন্য জার্মানির মিউনিখে শিল্পপতিদের আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর। বুধবারের শিল্প সম্মেলনে হাজির ছিলেন জার্মানির শতাধিক শিল্পপতি। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে যাওয়া শিল্পপতিরাও। সিঙ্গাপুর, লন্ডনের পর এবার মিউনিখে শিল্প সম্মেলন। কিন্তু শিল্প কি আসবে?  অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, বিনিয়োগের জন্য সবার আগে দরকার জমি ও শিল্প সহায়ক পরিবেশ। সেটা না থাকলে কিন্তু বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাবেন না।

 

অর্থনীতিবিদ গৌতম গুপ্ত বলেছেন, ‘বড় বড় সংস্থাগুলি লং টার্ম ভাবনাচিন্তায় চলে। অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করে। রাজ্যে বিনিয়োগের সেরকম কোনও পরিকল্পনা আগে থেকে করে রাখলে আলাদা কথা, না হলে এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়া কিছু নয়‍। রাজ্যের যা পরিস্থিতি, তাতে বেশিরভাগ বার্তা যাচ্ছে নেগেটিভ। বড় বিনিয়োগ আসার বিষয়ে আশাবাদী নই।’

 

বণিকমহলের একাংশের মতে, রাজ্যে বিনিয়োগ টানা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রস্তাবিত বিনিয়োগের সংখ্যার নিরিখে ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে দশম স্থানে ঠাঁই হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের। গত বছর ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সমীক্ষাতেও শিল্পবান্ধব পরিবেশের নিরিখে প্রথম দশটি রাজ্যের মধ্যে ছিল না পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের স্থান হয়েছিল ১১ নম্বরে। এ ছাড়া, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ীও, ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে লগ্নির হিসেবে শেষ পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে ঠাঁই হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগকারীদেরও পছন্দের তালিকায় কলকাতা এক্কেবারে তলানিতে।

 

এই প্রেক্ষাপটে, সিঙ্গুর আবার নতুন করে চিন্তা বাড়িয়েছে। কারণ, সিঙ্গুরকে জমি ফেরত পেতে দেখে একই দাবি উঠেছে অন্যত্রও। এই পরিস্থিতিতে বণিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, সবাই এভাবে জমি ফেরত চাইলে এবং তা দিয়ে দেওয়া হলে শিল্প হবে কোথায়? বিশেষজ্ঞদের অনেকে অবশ্য বলছেন, সরকার মিউনিখে গিয়ে শিল্প সম্মেলন, বিএমডব্লুর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরই বাংলায় বিনিয়োগের ঢল নামবে এমনটা কেউই আশা করে না। কিন্তু বিনিয়োগ টানার রাস্তা সুগম করতে এই পদক্ষেপগুলি জরুরি। পশ্চিমবঙ্গ যে শিল্পপতিদের ডেস্টিনেশন হয়ে উঠতে পারে, সেই বার্তা দেওয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিনিয়োগ টানতে হলে সবার আগে প্রয়োজন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন। এই সফরের মধ্যে দিয়ে সেটা সম্ভব।

 

অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি পাল্টাতে সময় লাগছে। মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন। আমি আশবাদী।’

 

বাম আমলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনও মিউনিখ গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন বিএমডব্লুর দফতরে। যে বাভেরিয়া প্রদেশের আইনমন্ত্রী এ দিন শিল্প সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সেখানকারই মন্ত্রিসভার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন নিরূপম সেন। কিন্তু লাভের কিছু হয়নি। এবার কী হবে? মিউনিখ থেকে লগ্নি আসবে? কিংবা লগ্নি আসার রাস্তা পরিষ্কার হবে? উত্তরের অপেক্ষায় রাজ্যবাসী।