নয়াদিল্লি: চেচনিয়ার নেতা রামজান কাদিরভের রোষের মুখে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। রাশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ অংশের দাপুটে নেতা কাদিরভ। তিনি প্যারিসের শহরতলির স্কুলের বাইরে শিক্ষককে গলা কেটে হত্যার নিন্দায় মাকরঁ যে ভাষায় ইসলামি কট্টরপন্থীদের সমালোচনা করেছেন, তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়ে তাঁকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলেছেন। স্যামুয়েল পেটি নামে ফরাসি শিক্ষক অবাধ বাকস্বাধীনতার ওপর ক্লাসে পড়ানোর সময় পয়গম্বর হজরত মহম্মদের ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করে অনলাইনে কট্টরপন্থীদের রোষের মুখে পড়েন। ফরাসি কার্টুন ম্যাগাজিন শার্লি এবদোয় ২০১৫ সালে মহম্মদের যে ব্যঙ্গচিত্র ছাপা হওয়ায় তাদের দপ্তর জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত হয়েছিল, সেই ছবিই ক্লাসে দেখান পেটি। এজন্য চলতি মাসে তাঁকে গলা কেটে খুন করে ১৮ বছরের চেচেন যুবক আবদুল্লাখ আনজোরভ, যার জন্ম মস্কোয় হলেও পরে যে অভিভাবকদের সঙ্গে প্যারিস চলে এসেছিল।
মাকরঁ ফরাসি স্কুলশিক্ষকের সমর্থনে যেভাবে সরব হয়েছেন, তার নিন্দা করে কাদিরভ বলেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিজেকেই সন্ত্রাসবাদীর মতো আচরণ করছেন। তিনি উসকানি সমর্থন করে পরোক্ষে মুসলিমদের অপরাধে সামিল হতে বলছেন। মাকরেঁর অবস্থানে বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মুসলিম অসন্তুষ্ট বলে জানিয়ে কাদিরভ বলেছেন, এধরনের নীতি ‘ট্র্যাজিক’ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। খুব বেশি দেরি হয়ে যাওযার আগে আপনার প্ররোচনা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আঘাত বন্ধ করুন মাকরঁ, নয়তো ইতিহাসে আপনি পাগলের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রেসিডেন্ট বলে চিহ্নিত হবেন। আপনি সহজেই নিজেকে আপনার দেশে সন্ত্রাসবাদের নেতা ও রূপকার বলতে পারেন।
স্কুলশিক্ষকের বীভত্স গলা কেটে হত্যার ঘটনায় ফ্রান্সে তীব্র প্রতিক্রিয়া, শোকের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তবে কাদিরভের দাবি, আনজোরভের চেচনিয়ার সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই।
পেটি হত্য়ার পর মাকরঁ অবাধ বাকস্বাধীনতা ও ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্য়বোধের পক্ষে সওয়াল করে দেওয়া বিবৃতিতে অঙ্গীকার করেন, তাঁর দেশ কখনই ওই ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ বন্ধ করবে না। কিন্তু মাকরেঁর অবস্থানে ক্ষোভ ছড়িয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয়। সিরিয়ায় যেমন মাকরেঁর ছবি পোড়ানো হয়েছে, তেমনই লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে ফরাসি পতাকায় আগুন ধরানো হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরডোগান দেসবাসীকে ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন। কট্টরপন্থী ইসলাম সম্পর্কে মাকরেঁর কঠোর অবস্থানে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলির মধ্যেই সংঘাত চলছে। তিনি বলেছেন, ফ্রান্সে যেমন বলা হচ্ছে,তুরস্কের ছাপ-মারা পণ্য কিনবেন না, তেমনই আমি নিজের দেশবাসীকে বলছি, কখনও ফরাসি লেবেল মারা পণ্য ব্যবহার করবেন না। কাতার, কুয়েতের সুপারমার্কেটেও ফরাসি পণ্য বয়কট চলছে।