নয়াদিল্লি : চলতি বছরের মে মাসে ১০ হাজার মিটার গভীর গর্ত খোঁড়ার প্রক্রিয়া শুরু করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল চিন। সেবার অবশ্য তাদের যুক্তি ছিল, ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে এবং খনন-প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে এই উদ্যোগ। কিন্তু, সেটাই যে চিনের এত বড় খননকার্যের শেষ ছিল না, তা পরিষ্কার হচ্ছে সাম্প্রতিক খবরে। দ্বিতীয়বার অতি গভীর গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু করল চিন। এবার অবশ্য তাদের উদ্দেশ্য পৃথক। চিনের দাবি, ভূপৃষ্ঠের অতি গভীরে প্রাকৃতিক গ্যাসের সঞ্চয় খুঁজে বের করতে চাইছে তারা। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে চাইনা ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্প (CNPC)। যারা শেন্ডি চুয়াঙ্ক ১ কুয়ো খোঁড়ার কাজ শুরু করেছে সিচুয়ান প্রদেশে। যার আনুমানিক গভীরতা হবে ১০ হাজার ৫২০ মিটার (প্রায় সাড়ে ৬ মাই)। এমনই খবর জিনহুয়া সংবাদ সংস্থা সূত্রের।
মে মাসে চিনের জিনজিয়াংয়ে প্রথমবার বড়সড় গর্ত খোঁড়া শুরু করেছিল CNPC। সেটাই ছিল চিনের উদ্যোগে সবথেকে বড় গর্ত। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, মানুষের খনন করা বিশ্বের সবথেকে বড় গর্তটি রয়েছে রাশিয়ায়। উত্তর পশ্চিম রাশিয়ায় অবস্থিত কোলা সুপারডিপ বোরহোলের গভীরতা ১২ হাজার ২৬২ মিটার। যা এখনও পর্যন্ত সবথেকে গভীর গর্ত। তত গভীর না হলেও, এবার তার কাছাকাছি গভীরতার গর্ত খুঁড়তে চলেছে চিন। এই দেশের দক্ষি-পূর্ব কোণে রয়েছে সিচুয়ান প্রদেশ। এই এলাকা মশলাদার খাবার, অপরূপ সুন্দর সব পাহাড়-পর্বত ও পান্ডার জন্য বিখ্যাত। এর পাশাপাশি চিনের সবথেকে বড় শেল গ্যাসের সঞ্চয় রয়েছে এখানে। তাই সিচুয়ান প্রদেশেই প্রাকৃতিক গ্যাসের সঞ্চয় কতটা রয়েছে তা দেখতে চাইছে তারা।
এদিকে, চিন সরকারের আওতাধীন তৈল সংস্থার নামারকমের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে খুব কম সাফল্য রয়েছে। কারণ, দেশে ভূগর্ভের জটিল অভ্যন্তরীণ দশা। অথচ, জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। এই পরিস্থিতিতে চিন সরকার এনার্জি সরবরাহকারী সংস্থাগুলির উপর চাপ বাড়াচ্ছে। যাতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়িয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা তৈরি করা যায়। গোটা বিশ্বজুড়ে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই চিনের জ্বালানির ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সেদিকে এবার রাশ টানতে চাইছে চিন সরকার। সেজন্যই এই গর্ত খোঁড়া উদ্যোগ বলে দাবি করা হয়েছে চিনের তরফে।
তবে, এনিয়ে চিনের উদ্বেগের আরও একটি কারণও রয়েছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। তাদের বক্তব্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ভৌগলিক-রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে এনার্জির সঙ্কট যেমন বাড়ছে, আগামীদিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে চিন সরকার। সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই এবার তেল সংগ্রহে নয়া কৌশল গ্রহণ করল তারা।