নাগপুর: সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে তপ্ত মহারাষ্ট্র। ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি, তাঁর কুশপুতুল পোড়ানোকে ঘিরেই অশান্তির সূচনা। পর পর গাড়িতে আগুন ধরানো থেকে ইঁট-পাথরবৃষ্টি, কিছুই বাদ রইল না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেলও। গোটা ঘটনাকে ঘিরে থমথমে পরিবেশ এই মুহূর্তে। রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস শান্তির আবেদন জানিয়েছেন। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারার আওতায় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ বাহিনী। (Nagpur Clash)
ঘিরে অশান্তির সূচনা ঘটে। খুলদাবাদ থেকে ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরাতে হবে বলে দাবি জানিয়ে রাস্তায় নামে তারা। ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের মূর্তি থেকে শুরু হয় মিছিল। পোড়ানো হয় ঔরঙ্গজেবের কুশপুতুলও। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সেই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ 'কোরান' পোড়ানো হয়েছে বলেও ছড়ায় গুজব। এর পরই পরিস্থিতি তেতে ওঠে। ( Aurangzeb Tomb Row)
বজরং দলের মোকাবিলায় রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। দুই তরফে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমে আক্রান্ত হয় পুলিশও। ইঁট-পাথর বৃষ্টিতে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হন। পর পর গাড়িতে আগুন ধরানো হলে দমকলবাহিনী ছুটে আসে। কিন্তু দমকলেরও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কয়েক জন দমকল কর্মীও আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এর পর লাঠিচার্জ করা হয়। ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। আহত পুলিশকর্মীদের অবস্থা তেমন গুরুতর নয় বলেই জানা গিয়েছে। তবে গোটা ঘটনায় থমথমে পরিবেশ মহল এলাকায়।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাগপুরের পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্র সিঙ্গল বলেন, "একটি ছবি পোড়ানো হয়েছিল, যা অশান্তিতে ইন্ধন জোগায়। এই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। শুরু হয়েছ তদন্ত। পরবর্তীতে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। কিছু পুলিশকর্মী আহত হন। তবে আঘাত গুরুতর নয় কারও।" রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ফড়ণবীস সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'নাগপুর শান্তিপূর্ণ শহর। মানুষ সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেন পরস্পরের সঙ্গে। গুজবে কান দেবেন না'।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর বক্তব্য, 'গুজবের জেরে নাগপুরে 'গুজবের জেরে নাগপুরে ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। নাগপুর বরাবরই শান্তিপূর্ণ জায়গা। আমা সমস্ত ভাইদের বলব, গুজবে কান দেবেন না। শান্তি বজায় রাখুন। রাস্তায় না নামে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহযোগিতা করুন আপনারা। নাগপুর শান্তি এবং সম্প্রীতির জন্যই পরিচিত, সেই ধারা বজায় রাখুন। প্রশাসন সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে'।
গডকড়ী আরও লেখেন, 'আমি কথা দিচ্ছি, যারা ভুল করেছে, বেআইনি কাজে লিপ্ত হয়েছে, সরকার তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে। মুখ্যমন্ত্রীকে পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছে। আমি সকলকে বলব, গুজবে কান দেবেন না। পুলিশ এবং প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। ভালবাসা, সম্প্রীতি বজায় রাখুন। আপনাদের সকলের কাছে আবার বিনীত আবেদন...'।
এই গোটা ঘটনায় বিজেপি-কেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মহারাষ্ট্র বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়াদেত্তিওয়ার। শান্তির আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, "ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাতে জোগানো হচ্ছে ইন্ধন। নাগপুরের মানুষকে বলব, শান্তি বজায় রাখুন। কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে, খেয়াল রাখতে হবে।"
এখনও পর্যন্ত যা খবর, চিটনিস পার্ক থেকে শুক্রবারী তালাও এলাকা পর্যন্ত হিংসার প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল। পর পর চারচাকার গাড়িতে আগুন ধরানো হয় সেখানে। সাধারণ মানুষের বাড়ি লক্ষ্য করেও ইঁট-পাথর ছোড়া হয়। বজরঙ্গ দলের দাবি, তারা শুধুমাত্র ঔরঙ্গজেবের কুশপুতুল পোড়ায়। যদিও গণেশপেঠ থানায় 'কোরান' পোড়ানোর অভিযোগ দায়ের হয়। এর পরই মহল, কোতোয়ালি, গণেশপেঠ, চিটনিস পার্কে দলে দলে রাস্তায় নামেন মানুষ।