ভেলোর:  বাঙালির চিকিৎসার ঠিকানা বহুদিন ধরে ভেলোর। দক্ষিণের এই ছোট্ট শহরের অর্থনীতি দাঁড়িয়েই রয়েছে চিকিৎসা পর্যটনের ওপর, আর চিকিৎসা যাঁরা করাতে আসেন তাঁদের সিংহভাগ বাঙালি। সারা বছর এই শহর গমগম করে বাঙালির ভিড়ে, রাস্তাঘাটে হামেশা শোনা যায় বাংলা কথা, বাঙালি খাবারের জন্য রয়েছে মুখার্জির হোটেল, ব্যানার্জির হোটেল ইত্যাদি। লকডাউনের আগেও বহু বাঙালি চিকিৎসার কারণে ভেলোরে এসেছিলেন, আচমকা লকডাউন শুরু হতে নিতান্ত অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।


প্রদীপ পালের কথা ধরুন। উইপ্রোয় কর্মরত প্রদীপ ডানকুনির বাসিন্দা। সাড়ে ৫ বছরের মেয়ে পূর্ণিকা অসুস্থ, ৬ মাস অন্তর তাকে নিয়ে প্রদীপকে ভেলোর আসতে হয়। এবারেও স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে ১৪ তারিখ রুটিন ভিজিটে ভেলোর আসেন তিনি। ২৩ তারিখ শেষ হয় চিকিৎসা, ২৪ তারিখ ফেরার টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু ২২ তারিখের জনতা কারফিউয়ের পর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, ২৩ থেকে শুরু হয় লকডাউন। সেদিন ভেলোরের নিকটতম কাটপাডি স্টেশনে গিয়েছিলেন প্রদীপ, দেখেন, ফেরার ট্রেন বন্ধ। বিমানভাড়া চাইছে মাথা পিছু ২০,০০০ টাকা করে। পরদিন থেকে বন্ধ হয়ে যায় বিমান পরিষেবাও।

প্রদীপের বাড়িতে রয়েছেন মা ও শাশুড়ি। ৭৬ বছরের মায়ের স্ট্রোক হয়েছিল, প্যারালিসিস হওয়ায় ফিজিওথেরাপি চলে তাঁর। শাশুড়ির মাসদুয়েক আগে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে, তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। একজন কাজের লোক ছিলেন, লকআউটে আসতে পারছেন না তিনিও। এদিকে প্রদীপও ফিরতে পারছেন না। শুধু তিনি নন, একই অবস্থা এই হোটেলে বন্দি ১২টা বাঙালির পরিবারের। হোটেলে জল নেই, কিনতে হয়। সেই জলের গাড়িও আসছে না। বাচ্চার দুধ মিলছে না ৩ দিন ধরে।



এখানকার বেশিরভাগ বাঙালি ছোট গ্যাস ভাড়া করে নিজেরাই রান্নাবান্না করেন, রান্নার কাঁচা সবজি কিনতে হচ্ছে হোটেলের নীচের একটি দোকান থেকে, ৩ গুণ বেশি দাম দিয়ে। আগে চেকআউটের সময় বিল মেটাতে হত, এখন রোজকার ভাড়া রোজ গুণতে হচ্ছে। অথচ হাতের টাকা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে, চালু হয়েছে শুধু ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজের ভেতর একটা এটিএম। সেটার ওপর নির্ভরশীল এলাকার সমস্ত মানুষ, সেটা যদি কোনওভাবে নষ্ট বা বন্ধ হয়ে যায়, তবে মারাত্মক সঙ্কটে পড়বেন তাঁরা।

ভেলোরে এই মুহূর্তে হাজারের বেশি বাঙালি পরিবার চিকিৎসার জন্য রয়েছেন, তাঁদের সকলেরই এমন নিরুপায় অবস্থা। অনেকেই গুরুতর অসুস্থ, কারও কারও অপারেশন করানোর ছিল, লকডাউনে হাসপাতাল বন্ধ, অপারেশনও অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে। অথচ চিকিৎসা ছাড়া অসুস্থ অবস্থাতেই ভেলোরে পড়ে রয়েছেন তাঁরা। দেখুন তাঁদের ফেসবুক লাইভে সাহায্য প্রার্থনা


ফেরার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে টুইট করেছেন প্রদীপরা। সাড়া মেলেনি। কথা বলেছেন হুগলির জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, বাড়িতে মায়েদের যদি এমার্জেন্সি চিকিৎসা পরিষেবার প্রয়োজন হয়, তবে ব্যবস্থা হবে, রেশনের দরকার হলে মিলবে বিডিওর মাধ্যমে। ভেলোরের জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়েছেন, আজ দুপুরে হোটেলে খাবার পাঠানো হবে।